• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ভোক্তার দেওয়া ট্যাক্স যাচ্ছে কোথায়

ভ্যাট কোথায় যাচ্ছে

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

অপরিশোধিত ভ্যাটের টাকা

ভোক্তার দেওয়া ট্যাক্স যাচ্ছে কোথায়

  • প্রকাশিত ০৫ আগস্ট ২০১৮

ব্যবসায় সফল বৃহৎ পুঁজির কোম্পানিগুলোর ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা ব্যাধির রূপ পরিগ্রহ করেছে। রাজস্ব বোর্ডে জমা দেওয়া বিভিন্ন কোম্পানির হিসাব বিবরণী অডিট করে ফাঁকির বিষয়টি ধরা পড়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, এ যাবৎ অপরিশোধিত মূল্য সংযোজন কর তথা ভ্যাটের অঙ্ক ১৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। রাজস্ব বিভাগ ৬২টি বৃহৎ কোম্পানিকে চিহ্নিত করেছে যারা নিয়মিত ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু সংখ্যক সরকারি কোম্পানিও রয়েছে। বেসরকারি খাতে মোবাইল অপারেটর, টোব্যাকো, স্টিল ও ব্যাংক-বীমা কোম্পানি রয়েছে এই তালিকায়।

বিশ্বে ১৪০টিরও বেশি দেশে এই মূল্য সংযোজন কর ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সর্বপ্রথম তার সদস্য দেশগুলোতে এই পরোক্ষ কর ব্যবস্থা চালু করে, যদিও মূল্য সংযোজনের এই তত্ত্বটি সামনে এনেছেন কার্ল মার্কস। মার্কস তার উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্বে দাবি করেন যে, এর পুরোটাই শ্রমিকের প্রাপ্য। কিন্তু ধনবাদী অর্থনীতিতে সেটাই ভোক্তাদের ওপর পরোক্ষ করে রূপান্তরিত হয়। আমেরিকায় ভ্যাট নেই। বিকল্প হিসেবে আছে বিক্রয় কর, যা একেক রাজ্যে একেক রকম। বিক্রয় করের হারও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল গভর্নমেন্ট কোনো ভ্যাট আরোপ না করার কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে, ব্যক্তিগত ও করপোরেট ইনকাম ট্যাক্স ও অন্যান্য প্রত্যক্ষ করই দেশটির উচ্চ রাজস্ব আয়ের জন্য যথেষ্ট। আমাদের মতো দেশগুলোতে প্রত্যক্ষ করের আওতা খুবই সীমিত। আয়কর পরিশোধ না করার প্রবণতা প্রবল। সরকারও এই দিকটায় গুরুত্ব দিতে চায় না। বাংলাদেশে ভ্যাট প্রবর্তন করেন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান। পরবর্তী সময়ে কোনো অর্থমন্ত্রীই পরোক্ষ করের এই ভ্যাট ফর্মুলার বিকল্প সন্ধান করেননি। বরং বছর বছর ভ্যাটের আওতা প্রসারিত হয়েছে। পরোক্ষ করের এই জাল থেকে পথের ভিখারিও মুক্ত নয়। কিন্তু পরিহাসের বিষয় হলো, সারা বছর এই খাতে যে বিপুল অঙ্কের ট্যাক্স আদায় করা হয়, তার সিংহভাগই থেকে যায় ছোট-বড় শিল্প-বাণিজ্যিক কোম্পানির পকেটে। রাজস্ব খাতে তা জমা পড়ে না। জনসাধারণের ওপর ভ্যাট নামক ট্যাক্সটি পরোক্ষ হলেও, এ খাতে যে চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় গহণ করা হচ্ছে, তাকে প্রত্যক্ষ বলা হলে মোটেও বেশি বলা হয় না। মোবাইল ফোনের একজন গ্রাহক ১০ টাকার টকটাইম কিনতে গেলেও তৎক্ষণাৎ তিনি ভ্যাট পরিশোধ করেন। প্রথমে এটি জমা হয় অপারেটরের তহবিলে। অতঃপর নিয়মানুযায়ী সেই টাকার পুরোটাই রাজস্ব খাতে জমা দিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু সেটা দেওয়া হচ্ছে না।

এটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের সঙ্গে যেমন প্রতারণামূলক আচরণ, তেমনি অবিচারও। রাজস্ব আদায়ে সরকারের নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান এই ক্ষেত্রে কতটা দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বা দায়িত্বে অবহেলা করছে কি না- তা খতিয়ে দেখা দরকার। হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আটকে থাকায় দেশের অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এ জন্য যারা অপরাধী তাদের যথাযথ আইনের আওতায় আনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরই দায়িত্ব।  

দেশবাসীর দেওয়া হাজার হাজার কোটি টাকার ট্যাক্স কেন অনাদায়ী থাকবে? ভোক্তাসাধারণের নিকট থেকে রাজস্ব খাতের নামে ট্যাক্স আদায় করে সেটি পরিশোধ না করা কোনোমতেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads