সম্প্রতি ভারতের অরুণাচল ও আসাম রাজ্যের বেশকিছু এলাকা বন্যার পানিতে ভাসছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের তরফ থেকে সতর্ক করা হয়েছে বাংলাদেশকেও। অবশ্য বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, উজানের এ পানিতে দেশে বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবু সতর্ক রয়েছে বাংলাদেশ। দৈনিক বাংলাদেশের খবরের ‘বন্যার শঙ্কায় সতর্ক বাংলাদেশ’ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি বলছে, ইতোমধ্যে উজানে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির উচ্চতা গত ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। চীনের দক্ষিণাঞ্চলে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ফুলে-ফেঁপে ওঠা এই নদ নিম্নাঞ্চলের অববাহিকায় অকাল বন্যার ঝুঁকি তৈরি করেছে। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার থেকে সৃষ্টি হয়েছে সাগরে নিম্নচাপ। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তার সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গত মঙ্গলবার থেকে অবস্থানরত মৌসুমি লঘুচাপটি এখন নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে আমাদের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২ থেকে ৩ ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সংকেত বিরাজমান। আবার আবহাওয়া অফিস বলছে, চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে শেষ অবধি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে একটি অকাল বন্যার ঝুঁকি কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।
গত বছর উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে আমাদের হাওরাঞ্চল তলিয়ে গিয়েছিল। বিপর্যস্ত শুধু মানুষই হয়নি; খাদ্য, আবাসন, যাতায়াত ব্যবস্থাও ধসে পড়েছিল। দেশজুড়ে ছিল চালের অগ্নিমূল্যসহ অসহনীয় বাজারদর। এ ছাড়াও ধান তলিয়ে যাওয়ায় পচা ধানের কারণে বিষক্রিয়ায় মাছ ও হাঁসের মৃত্যু, গবাদিপশুর খাদ্যের অভাব এবং মানুষের রোগব্যাধির হুমকি দেখা দেয়। সুতরাং আবারো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘূর্ণিঝড় কিংবা জলোচ্ছ্বাসের মতো বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের কাম্য নয়। বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই উন্নতি করছে। কিন্তু এই উন্নয়ন স্থায়ী করতে অসময়ের যে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে রোলমডেল। কিন্তু আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে পরিমাণ ক্ষতি সাধিত হয়, তা অকল্পনীয়। সুতরাং একে মোকাবেলা একা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। আবার এ সমস্যা থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা বিশেষ আইনই যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে যা দরকার তা হলো, দেশের প্রতিটি মানুষের সঠিক সচেতনতাবোধ। সেই সচেতনতা থেকেই বড় বিপর্যয় ঘটার আগে উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষায় বিদ্যমান বাঁধগুলোর যথাযথ সংরক্ষণ প্রয়োজন। আবার শুধু বাঁধ দিয়েই হাওর বা উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষা করা যাবে না। বরং সুরমা, কুশিয়ারাসহ যেসব নদী দিয়ে উজানের পানি নামে, প্রায় সবই ভরাট হয়ে গেছে। তাই এসব নদী খননও অত্যন্ত জরুরি। হাওর ও উপকূলীয় অঞ্চল বিপন্ন হলে পুরো দেশই বিপন্ন হয়ে পড়বে। আর তাই বন্যা-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে এখনই একটি সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কামনা করছি।