• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
অর্থনীতির জন্য অশনিসঙ্কেত

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ

অর্থনীতির জন্য অশনিসঙ্কেত

  • প্রকাশিত ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ। চলতি বছরের জুন মাস শেষে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১০.৪১ শতাংশ। স্বাধীনতার পর এ যাবৎ খেলাপি ঋণের এই হার সর্বোচ্চ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিলেও কার্যত তা কাজে আসছে না। গত ১১ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত দৈনিক বাংলাদেশের খবরের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনটি বলছে, জুন প্রান্তিক শেষে ৫৭ ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১০.১৩ শতাংশ। ওই সময়ে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৩১ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, গত বছরের তুলনায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকই রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের। তা ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। জুন শেষে ৪০ বেসরকারি ব্যাংকের মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণই হচ্ছে ৩৮ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা- যা মোট ঋণের ৬.০১ শতাংশ। সুতরাং বলাই যায়, বছর বছর খেলাপি ঋণের এই ঊর্ধ্বহার দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য আশঙ্কাজনক।

চলতি বছরের শুরুতে মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘দেশের ব্যাংকগুলোতে এই মুহূর্তে ঋণ ও আমানতের অনুপাত সাধারণ মাত্রার চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত এটি নিয়ন্ত্রণ করা।’ তখনই অর্থমন্ত্রীর এই উদ্বেগ থেকে বোঝা গিয়েছিল, দেশের ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে ঋণ ও আমানত কতটা ভারসাম্যহীন। গত ১৬ আগস্ট প্রকাশিত দৈনিক বাংলাদেশের খবরেরই একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে পরিবহন খাত। শুধু পরিবহন খাতেই মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ছয় হাজার কোটি টাকা রয়েছে এ খাতের বড় খেলাপি ১০ কোম্পানির হাতে। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের প্রায় ১৬ শতাংশই পরিবহন খাতের। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, রাজধানীসহ দেশের পরিবহন খাত ও শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাসীনদের হাতে। আর তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অনেক পরিবহন ব্যবসায়ী প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নিয়েছেন, ব্যবসা করছেন, কিন্তু ব্যাংকের দায় পরিশোধ করছেন না। ফলে এ খাতে খেলাপি ঋণের বোঝা বৃদ্ধি পেয়েছে দিন দিন। বড় কোম্পানিগুলোর বাইরেও এভাবে বড় অঙ্কের খেলাপি সৃষ্টি হয়েছে পরিবহন সেক্টরে। কিন্তু এটা কাম্য হতে পারে না।

এভাবে চলতে থাকলে ঋণখেলাপির পরিমাণও বেড়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। ফলে কিছু সংখ্যক অসাধু গোষ্ঠী ফুলেফেঁপে উঠলেও জাতীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে কালো টাকার প্রবাহও বৃদ্ধি পাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে সামনে নির্বাচন। সুতরাং কালো টাকা প্রতিহত করাও বাঞ্ছনীয়। তাই এখন থেকেই ঋণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা আবশ্যক। সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি, আইনের কঠোর প্রয়োগ না হওয়া, সুশাসনের ঘাটতি, উচ্চ পর্যায়ের সিন্ডিকেটসহ নানা জটিলতায় খেলাপি ঋণ আদায় আশানুরূপ হচ্ছে না। এ খাতে বিনিয়োগের আগে ব্যাংকগুলোকে আরো সতর্ক হতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে তাদের নিজস্ব উদ্যোগ ও কার্যকর পদক্ষেপ থাকতে হবে। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও সব ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে তাদের রাষ্ট্রীয় কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র-শক্তির কাছে কোনো কায়েমি-শক্তি বড় হতে পারে না। দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে কাজ করা জরুরি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads