• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
দুদককে শক্তিশালী রাখা প্রয়োজন

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

দুদককে শক্তিশালী রাখা প্রয়োজন

  • প্রকাশিত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সাঈদ চৌধুরী

কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে গ্রেফতারের আগে সরকারি অনুমতির বিষয়টি খুব বেশি হতাশা সৃষ্টি করেছে। ‘সরকারি চাকরি আইন’ শিরোনামে যে আইনটি নতুনভাবে আসছে সেখানে সপষ্টভাবে এ কথাটি উল্লেখ থাকলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ মূলত মুখ থুবড়ে পড়বে।

প্রতিটি ক্ষেত্রে যেখানে দুর্নীতির লাগামহীন আচরণ, সেখানে দুদকের একা বিপরীত অবস্থান যেমন কার্যকর নয়; তেমনি সরকারের সহযোগিতা ছাড়া কোনো দুর্নীতিই বন্ধ করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন ধরনের অপকৌশল প্রয়োগ করে দুর্নীতি করা মানুষগুলো এমনিতেই লাগামহীন আর সেখানে যদি বলেই দেওয়া হয়- তুমি মুক্ত, তবে কতটা সুফল বয়ে আনতে পারবে দুদক?

অনেক তথ্য এখনো সাধারণ মানুষ জানে না। তথ্য জানার জন্য কোনো অফিসে গেলেও তার জন্য অপেক্ষা করছে দুর্নীতি। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হওয়ার আগ পর্যন্ত গ্রেফতারের নির্দেশ না থাকলে দুদকের কাজ আসলে কী- তা নিয়েই সন্দেহের সৃষ্টি হবে এবং দুর্নীতি আরো অনেক বেশি পরিমাণে বেড়ে যাবে, যা আমাদের দেশের কল্যাণের ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হবে।

দুদকের বিদ্যমান আইনের ২৮-এর ১ ধারা অনুযায়ী সন্দেহভাজন যে কোনো দুর্নীতিবাজ বা মামলার কোনো আসামিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করার বিধান রয়েছে। এ বিধান অনুযায়ী দুদক গত কিছুদিনে অনেক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ঘুষ গ্রহণের সময় হাতেনাতে গ্রেফতারও করেছে। যদিও বড় দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতি ছিল, তবুও দুর্নীতিবাজরা ভয় পেতে শুরু করেছিল দুদকের বর্তমান কার্যক্রমে।

দুর্নীতির গ্রাফ যে হারে বাড়ছে তাতে প্রতিটি প্রকল্পে সরকারের ক্ষতি অনেক বেশি। কিছুদিন আগে রাস্তার কাজগুলোর অনিয়ম নিয়ে লেখা হয়েছে বিস্তর। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার কাজের ব্যয় সংবলিত সাইনবোর্ড দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা অনেক ক্ষেত্রেই দেওয়া হয়নি। এখানে যদি কোনো দুর্নীতি হয়, তবে কীভাবে মানুষ জানবে যে কার্য সম্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি করেছে বা করেনি। যেখানে স্বচ্ছতার বেশি প্রয়োজন সেখানেই যখন দুদকের কার্যকারিতা বাড়ানোর ব্যাপারে আমরা আবেদন করে আসছি, সেখানে এমন আইন আরো দুর্নীতি বাড়িয়ে দিতে পারে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও বার বার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। কিছুদিন আগে সচিবদের ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থানের কথা ব্যক্ত করেন তিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে এটাও বলেছেন, আপনাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করাই হচ্ছে যাতে আপনারা দেশের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে পারেন। পাশাপাশি তিনি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের হুশিয়ারও করেন।

যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে চাইছেন দুর্নীতি বন্ধে সরকার আরো কঠোর হোক, সেখানে এমন আইন আরো পর্যালোচনার সুযোগ রাখে, যাতে দুর্নীতি বন্ধে তা সহায়ক হয়। সে হিসেবে আইনটি প্রণয়ন হবে, সেটাই আমাদের আশা। আইন দুর্নীতি রোখার জন্যই করা প্রয়োজন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার জন্য আইনকে আরো শক্তিশালী করা অত্যাবশ্যক। দুদক যাতে গ্রেফতারের পর কোনো দোষী ব্যক্তির শাস্তির জন্য আরো বেশি শক্তিশালী অবস্থানে যেতে পারে আইন সেভাবে প্রণয়নের জন্যই সংশ্লিষ্ট সবার নিকট আবেদন রাখছি। সরকারি কর্মকর্মতাদের অনেক ভালো অবদান রয়েছে। অনেক কর্মকর্তা রয়েছেন যারা নিজেদের কাজ দিয়ে সমাদৃত হচ্ছেন। সরকারের মধ্যে এই কর্মকর্তারা নিজেদের কাজ দিয়ে অনেক নতুনত্বও নিয়ে এসেছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শ্রীপুর উপজেলার থানা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজে প্রতিবন্ধীদের জন্য স্কুল করে আলাদাভাবে পরিচিত হয়েছেন। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ইভটিজিং, মাদক, হোটেলে অসামাজিক কাজ বন্ধে প্রতিনিয়ত পদক্ষেপ গ্রহণসহ বিভিন্ন কাজ দিয়ে নিজেদের জনসাধারণের সহায়ক হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিছুদিন আগে পটুয়াখালীর একজন জেলা প্রশাসক নিজ কার্যালয়কে দুর্নীতিমুক্ত ঘোষণা করে সাইনবোর্ড দিয়েছিলেন। নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনেকেই এভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করলেও, কিছু অসাধু ব্যক্তি তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য অনৈতিক কাজ করছেন, যার প্রভাব পড়ছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে।

এই দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিগুলোকেই আইনের আওতায় আনা রাষ্ট্রের কর্তব্য। দুর্নীতি বন্ধের জন্য দুদককে স্বাধীনভাবে কাজ করার প্রক্রিয়া আরো দ্রুততর করায় সবাই সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন, এটাই আমাদের কামনা। আর যদি দুর্নীতি বন্ধে সঠিকভাবে কাজ করা যায়, তবে সুন্দর বাংলাদেশ আমাদের হাতের মুঠোয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি 

শ্রীপুর, গাজীপুর

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads