• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
সুপেয় পানির সন্ধান জরুরি

পানি পান করছে এক শিশু

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

সঙ্কট বিশুদ্ধতায়

সুপেয় পানির সন্ধান জরুরি

  • প্রকাশিত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বর্তমান নগর মানুষের কিনে খাওয়া দ্রব্যের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ‘পানি’। কিন্তু নগরবাসীর পিছু ছাড়ছে না পানি সমস্যা। আবার দুর্গন্ধ, ময়লা ও ফেনাযুক্ত ঘন কালো ঘোলাটে পানির সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা মেলে কেঁচো ও পোকামাকড়ের। সাধারণত গ্রীষ্ম মৌসুমে এই পানির সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করে রাজধানীজুড়ে। একে তো পানির অপ্রাপ্যতা, তার ওপর যেটুকু মেলে তা ফুটিয়েও দুর্গন্ধ দূর করা যায় না। এমনকি দূষিত পানি বহন করে নানা রোগজীবাণু। পানিবাহিত নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে হয় সাধারণ মানুষকে। এই প্রেক্ষাপটে দুর্গম পাহাড়ে বাতাস থেকে সুপেয় পানির উৎস সন্ধান আমাদের আশান্বিত করে তোলে। কানাডিয়ান পানি বিশেষজ্ঞ রোনাল্ড ওয়াগনার বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছেন।  

গবেষকদের মতে, মেঘ ছাড়াই বায়ুমণ্ডলের একদম নিচের স্তরে যে আর্দ্রতা থাকে, সেখানে প্রায় ১৩ হাজার ঘন কিলোমিটার পানি থাকে। বাতাসের অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে মিশে থাকা পানি বা জলীয় কণাকে ফাঁদ পেতে আটকে ফেলা হচ্ছে। এজন্য দরকার হয় পানি ধরে রাখার একটি আধার বা ট্যাঙ্ক, কিছু পাইপ ও ট্যাপ। এই মেশিন তৈরির জন্য খোলা মাঠ বা পাহাড়ের চূড়ায় প্রথমে বাঁশ দিয়ে উঁচু কাঠামো তৈরি করা হয়। এর সঙ্গে জড়ানো হয় মশারির মতো সূক্ষ্ম জাল। সেই জালে ধরা পড়া শিশির বিন্দু একটু একটু করে জমা হয় কাঠামোটির ভেতরে রাখা আধারে বা ট্যাঙ্কে। এরপর পাইপের মাধ্যমে ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করা হয় পানি। বর্তমানে বিশ্বের ৬৪টি কোম্পানি ইতোমধ্যে এই প্রযুক্তিটি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। 

আমাদের জীবনধারণের জন্য প্রতিনিয়তই পানির প্রয়োজন পড়ে। প্রকৃতির এই উপাদানটি ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে কোথাও অপচয় হচ্ছে, আবার কোথাও এর জন্য শুরু হয় বিদ্রোহ-লড়াই। বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, দূষণ ও ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির সঙ্কট। বিশেষত চরমভাবাপন্ন ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এ সঙ্কট তীব্র। আমাদের বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বিশেষত রাজধানী ঢাকাসহ নগরাঞ্চলে সুপেয় পানির স্বল্পতা প্রকট। উপরন্তু রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ সড়ক উন্নয়নের নামে খোঁড়াখুঁড়ির ফলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও ওয়াসার লাইন এক হয়ে যাওয়ায় বাসাবাড়ির সাপ্লাই লাইনে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি ঢুকে পড়ছে। যা ব্যবহারে হিমশিম খেতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এদিকে রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও সঙ্কট নিরসনে ঢাকা ওয়াসার পাঁচ শতাধিক জেনারেটর কাজ করে বলে জানা গেছে। কিন্তু এসব জেনারেটরের তেল কেনার নামে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের তেল চুরির অভিযোগও অতীতে পাওয়া গেছে। ফলে নগরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ব্যবহূত এসব জেনারেটর বেশিরভাগ সময় চালানো হয় না বলে জানা গেছে। 

নগরবাসী তার জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারকে কর ও খাজনা দিয়ে থাকে। সে তুলনায় সাধারণ নাগরিকরা কতটুকু তার প্রাপ্য পাচ্ছে— সে হিসাবও কর্তৃপক্ষকে করতে হবে। ‘পানির অপর নাম জীবন’— সেই জীবনের জন্য বিশুদ্ধ সুপেয় পানির সন্ধান জরুরি হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের দুর্বলতা ও ব্যর্থতার জায়গাগুলো খুঁজে বের করে তা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি সুপেয় পানির উৎস সন্ধানে আবিষ্কারকে কাজে লাগাতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads