• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বিচার ব্যবস্থায় আস্থা ফেরাতে হবে

আসামি ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

আসামি ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা

বিচার ব্যবস্থায় আস্থা ফেরাতে হবে

  • প্রকাশিত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই সাধারণ মানুষকে আইন হাতে তুলে নিতে দেখা যায়। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতার কারণেই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে চলেছে। দেশের সামাজিক মাধ্যম, সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায়ই দেখা যায়— গ্রাম্য সালিশ বৈঠকে বিচারের নামে বর্বর নির্যাতনে অনেক নারী-পুরুষকে সামান্য অপরাধে প্রাণ হারাতে হয়। এমন ঘটনা নতুন নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই ঘটে চলেছে এমন ঘটনা। সংবাদপত্রের বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা গেছে, পাড়া-গাঁয়ের একশ্রেণির মানুষ লঘু অপরাধের বিচার করতে গিয়ে গুরুদণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। আবার আরেক শ্রেণির মানুষ বিচার না পেয়ে আইনের প্রতি আস্থাহীন হয়েই ক্ষোভ প্রশমনে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে আবারো। গতকাল দৈনিক বাংলাদেশের খবরে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, একটি হত্যা মামলার আসামি আবদুল জলিল গাইনকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে জনতা পিটিয়ে হত্যা করেছে।

প্রকাশিত সংবাদের বিবরণ— সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির নেতা কেএম মোশারফ হোসেনকে স্থানীয় বেলেডাঙ্গা বাজারে গত ৮ সেপ্টেম্বর কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এই মামলার প্রধান আসামি আবদুল জলিল গাইনকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং তার দেওয়া তথ্যমতে বেলেডাঙ্গা বাজারের সন্নিকটে অস্ত্র উদ্ধার করতে যায়। সেখানে গেলে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের হাত থেকে আসামি ইউপি সদস্য আবদুল জলিল গাইনকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে।

পুলিশের হাত থেকে আসামি ছিনতাই করে নিয়ে গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি যেমন অশ্রদ্ধা; তেমনি শঙ্কারও বটে। একটি অপরাধ দমনের জন্য আরো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি অবিশ্বাস আর বিচারহীনতার চিত্রকেই প্রকাশ করে। এই ঘটনায় পুলিশ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। পুলিশের অবহেলা বা নেপথ্য সহযোগিতার ইন্ধন রয়েছে কি না তা ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। কয়েক বছর আগে দেশের ভোলা জেলাতেও এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছিল। এ ছাড়া কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠছে বলেও ইতিপূর্বে মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ তুলেছে। 

অপরাধীদের বার বার পার পেয়ে যাওয়া, দোর্দণ্ড ক্ষমতার প্রতাপ আর বিচারহীনতার কারণেই সাধারণ মানুষের মধ্যে বিচার না পাওয়ার শঙ্কা কাজ করছে। যার ফলেই সাধারণ মানুষের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে দিন দিন। অনাকাঙ্ক্ষিত এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন প্রশ্ন উঠেছে।

অপরাধ যত ভয়াবহ হোক না কেন অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনতে সুষ্ঠু প্রক্রিয়া অবলম্বন করাই দেশবাসীর কাম্য। আইন হাতে তুলে নেওয়ার বিপজ্জনক সংস্কৃতি কোনোভবেই কাম্য নয়। একটি সুষ্ঠু ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ দায়িত্ব পালন এবং অপরাধের শিকার ব্যক্তির আইনি অধিকার নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাহলেই বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে আসবে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads