• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করুন

বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস পালিত

সম্পাদকীয়

বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস পালিত

সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করুন

  • প্রকাশিত ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো গতকাল ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশেও পালিত হলো বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। সাধারণ মানুষ সাধারণভাবেই জানে, কুকুর নামক প্রাণীর কামড়ে লোকে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। কিন্তু এ নিয়ে সচেতনতার বড়ই অভাব রয়েছে সাধারণ্যে। পরিসংখ্যান বলছে, সচেতনতা ও সঠিক পদক্ষেপের অভাবে কমছে না এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। এমনকি, এ রোগে সংক্রমিত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যাও কমছে না উল্লেখযোগ্য হারে। তদুপরি রোগটির জীবাণুর প্রধানতম বাহক কুকুর নিধনের পরিবর্তে প্রাণীটিকে জলাতঙ্কের টিকা প্রদান এবং বেওয়ারিশ কুকুরের বাচ্চা জন্ম দেওয়া কমানোর কার্যক্রমে প্রত্যাশিত সাফল্যও আসেনি বিগত সময়ে। 

জলাতঙ্ক (হাইড্রোফোবিয়া বা রেবিস) একটি ভাইরাসঘটিত রোগ। র্যাবডো ভাইরাস এ রোগের কারণ। জলাতঙ্ক কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। এর ফলে মৃত্যু হয়। সাধারণত কুকুর, বিড়াল, শেয়াল, নেকড়ে, বেজি ইত্যাদির কামড়ের মাধ্যমে রেবিস সংক্রমিত হয়ে থাকে। আমাদের এ অঞ্চলে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে রেবিস কুকুরের কামড়ের মাধ্যমে এ রোগ হয়ে থাকে। এখানে একটি কথা জেনে রাখা প্রয়োজন, সুস্থ কুকুর বা প্রাণী কামড়ালে রেবিস হয় না। রেবিস ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুর (পাগলা কুকুর) কামড়ালে বা ক্ষতস্থানে চেটে দিলে সে ব্যক্তি রেবিসে আক্রান্ত হন। এ ধরনের কুকুরের সংখ্যা নির্ণয়ও আজ পর্যন্ত আমরা করতে পারিনি। সংশ্লিষ্টদের মতে, বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্কে বেশি আক্রান্ত হন নগর ও শহরের বাসিন্দারা। বিশেষত রাজধানীবাসী এই কুকুরের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ। সরকারি হিসাব মতে, রাজধানী ও আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন ২০০ লোক কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তবে জলাতঙ্ক রোগের বিষয়ে আমাদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকা সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৈন্য ও ব্যর্থতাকেই প্রকাশ করে।

তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, দেশে ৯৫ শতাংশ জলাতঙ্ক কুকুরের মাধ্যমে ছড়ায়। বর্তমানে প্রাণী অধিকার রক্ষায় পরিবেশ অধিদফতরের আইনি বাধার কারণে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া ২০১২ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কুকুর বন্ধ্যাকরণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে জলাতঙ্ক রোধের বিকল্প হিসেবে বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও এর টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলেও কার্যত আমরা এর কাঙ্ক্ষিত কোনো সফলতা দেখছি না। কর্তমানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যৌথ উদ্যোগে জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ফলে মৃত্যুহার আগের তুলনায় কিছুটা কমে এলেও সচেতনতার বড়ই অভাব রয়ে গেছে। সুতরাং জাতীয় পর্যায় থেকে শুধু জলাতঙ্ক দিবস পালন নয়, বরং অন্যান্য টিকা দিবসের মতো এই কার্যক্রমকেও দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমের সহায়তায় জনগণের চেতনায় বিষয়টিকে গেঁথে দেওয়া জরুরি।

এবারের বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবসে ‘জলাতঙ্ক : অপরকে জানান জীবন বাঁচান’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে অধিকতর সচেতনতা লাভ করবে, এই প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি আমরা এও আশা রাখি, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তব্যনিষ্ঠার সঙ্গে এক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব পালন করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads