• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

সংরক্ষিত ছবি

সম্পাদকীয়

নিরীহ সাধারণের ওপর বোমা হামলা

গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত

  • প্রকাশিত ১২ অক্টোবর ২০১৮

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার রোষানলে কেন সাধারণ জনগণ! নিরীহ মানুষের ওপর বার বার ঘটছে নৃশংস ঘটনা। গত বুধবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হওয়ার পর বগুড়ার শাজাহানপুরে রংপুর থেকে ঢাকাগামী বাসে আবারো পেট্রোল বোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে তিনজন নারীযাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। এ তিন নারীর কোনো অপরাধ ছিল না। তাহলে তারা কেন এই জঘন্য ঘটনার শিকার হলেন?

এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে রাজনৈতিক দুষ্কৃতকারীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রোল বোমা মেরে অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে, অনেক মানুষ পঙ্গু হয়ে যন্ত্রণায় জীবন পার করছেন। দুষ্কৃতকারীদের প্রতিহিংসার আগুন থেকে রেহাই পায়নি ছোটমণিদের স্কুল পর্যন্ত। পুড়ে অঙ্গার করে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই জঘন্য নৃশংসতার চর্চা কার স্বার্থে? এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কারা, আর লাভবান হচ্ছেন কে! ক্ষোভের আগুনে কেন পুড়বে নিরীহ মানুষ? এসব প্রশ্নের উত্তর নেই। শুধু বিপর্যস্ত হচ্ছে মানবতা।

দেশের দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ক্ষমতালিপ্সার দ্বন্দ্ব বার বার কেন সাধারণ মানুষের ওপর এসে গড়ায়। যাদের ভোটে বড় দলগুলো ক্ষমতার মসনদে বসেন, সে মানুষগুলোর প্রতি কেন সামান্য সহানুভূতি নেই! সম্মান নেই! কেন এ অসভ্যতার চর্চা শুরু হয়েছে? আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে যেসব নিরীহ মানুষ এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের দুয়েকজন ছাড়া অধিকাংশেরই কেউ খোঁজ রাখেনি। কারণ এরা কোনো দলের নেতা বা কর্মী নয়। হয়তো বড় দলগুলোর কোনো একটির সমর্থক। কোন অপরাধে বার বার নিরীহ মানুষের ওপর পেট্রোল বোমার হামলা হচ্ছে? এর দায় নেবে কে? হতাহতদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য আছে কার? ক্ষতিগ্রস্ত একেকটি পরিবারের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে শুধু হতাশারই জন্ম হচ্ছে। যে কারণে দুর্বৃত্তায়নের এই রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা-বিশ্বাস বা ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের এই অনাস্থা দেশের গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। বহির্বিশ্বেও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এসব অভব্য কর্মকাণ্ডে।

জনগণের প্রতি সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর উদাসীনতা আর অসম্মানের মাত্রা যে প্রকট হয়ে উঠেছে, এসব কর্মকাণ্ড সেই বার্তাই দিচ্ছে। ক্ষমতায় আরোহণের প্রতিযোগিতায় যে কোনো অমানবিক ঘটনা সংঘটন এ দেশের রাজনৈতিক কর্মীদের মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর এই লিপ্সার দ্বন্দ্ব গণতন্ত্রকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তেমনি প্রশ্নবিদ্ধ করছে মানবিকতাকেও। গণতান্ত্রিক দেশে যেখানে জনগণই সব ক্ষমতার উৎস, সেখানে জনগণের প্রতি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের এই অবিচার কখনোই সুফল বয়ে আনবে না। যে জনগণের জন্য রাজনীতি, সেই জনগণের যথাযথ নিরাপত্তা ও সম্মানের প্রতি আন্তরিক হলেই গণতন্ত্রের সুশাসন ফিরে আসবে এবং দেশের গণতান্ত্রিকতা স্থায়িত্বলাভ করবে। আমরা চাই সেই গণতন্ত্র, সেই রাজনীতি- যে রাজনীতি নিরীহ মানুষের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধার জায়গাকে আরো

বিস্তৃত করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads