• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

সম্পাদকীয়

জেলহত্যা দিবস

জাতীয় চার নেতাকে স্মরণ করি

  • প্রকাশিত ০৩ নভেম্বর ২০১৮

আজ জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালির জাতীয় চেতনা ধ্বংসের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এই একই চক্রান্তের ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয় ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ড। বাঙালি জাতির জীবনে এটি একটি কলঙ্কিত দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে সেনাবাহিনীর কয়েকজন বিপথগামী সদস্য যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল, সভ্য দুনিয়ায় এ ধরনের ঘটনা বিরল। সেদিনের বর্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী চার জাতীয় নেতা— সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামান। এই হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন বা কাকতালীয় ঘটনা ছিল না। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি বাঙালি জাতির মূল্যবোধ ধ্বংস করার সুগভীর চক্রান্তের অংশ হিসেবে এ ধরনের জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটায়। কিন্তু আমাদের সৌভাগ্য, স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকায় অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটাতে সক্ষম হয়েছি।

আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি জাতীয় এই চার নেতাকে। বঙ্গবন্ধুর দৈহিক অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান ছিল অমূল্য। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে তাদের একাত্মতা ছিল বলেই জাতির জনক সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ঘাতকদের ইচ্ছায় গঠিত মন্ত্রিসভায় এ নেতারা যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এটা ছিল মূলত বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদও। জাতীয় চার নেতার এই দৃঢ়চেতা মানসিকতা খন্দকার মোশতাক আহমদের সরকারকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। আর তাই খোদ মোশতাকের নির্দেশেই জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে চার নেতাকে একত্র করে গুলি চালিয়ে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে সেনাবাহিনীর বিপথগামী নরপিশাচরা। একটি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহিত সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বাঙালিকে দিয়েছে শাপমুক্তি। জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্নের মধ্য দিয়েই জাতীয় চার নেতার হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক আসামির সাজাও সম্পন্ন হয়। এই বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়েছে।

জেলহত্যার বিচারের যে প্রক্রিয়া আমরা লক্ষ করেছি, তাও হতাশাব্যঞ্জক বলা চলে। জেলহত্যা মামলায় যথাযথ তদন্ত হয়নি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর নিম্ন আদালত এ মামলার রায়ে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই পলাতক আসামিকে বেকসুর খালাস এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া চারজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে আসামিদের খালাস করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বাতিল এবং বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রাখার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। তবে এ দুই আসামি পলাতক। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ডাদেশ কার্যকর করা প্রয়োজন। স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি হিসেবে বর্তমান সরকার সে লক্ষ্যেই কাজ করবে

বলে আশা রাখি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads