• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
শ্রেণি ও বর্ণবৈষম্য দূরীকরণে রসুল (সা.)-এর ভূমিকা

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

শ্রেণি ও বর্ণবৈষম্য দূরীকরণে রসুল (সা.)-এর ভূমিকা

  • মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ
  • প্রকাশিত ০৪ নভেম্বর ২০১৮

পৃথিবীর বুকে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অন্যতম কারণ হচ্ছে মানবজাতির মধ্যে শ্রেণি ও বর্ণবৈষম্য। এর ফলে মানুষ হারিয়ে ফেলে ভ্রাতৃত্ববোধ, বিলীন হয়ে যায় তাদের মধ্যকার পারস্পরিক মায়ামমতা, বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ মধুর সম্পর্ক। তাদের জীবনে নেমে আসে শ্রেণি ও বর্ণবৈষম্যের ঘোর অন্ধকার। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত প্রিয়নবী (সা.)-এর আগমনের আগে গোটা পৃথিবী শ্রেণি ও বর্ণবৈষম্যের অতল তলে নিমজ্জিত ছিল। ফলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ছিল চরম অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্র পর্যায়ে যুদ্ধংদেহী মনোভাব, এমনকি সামান্য কোনো তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে প্রতিহিংসার কারণে বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে যেত ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ। রসুল (সা.) পৃথিবী থেকে এই শ্রেণি ও বর্ণবৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে আল-কোরআনের নির্দেশ বাস্তবায়নে ছিলেন তৎপর এবং এটি ছিল তাঁর অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ফলে ইতিহাস সাক্ষী, মহানবী (সা.)-এর আমলে মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর সেখানে কোনোরকম শ্রেণি ও বর্ণবৈষম্যের লেশমাত্রও ছিল না। অধুনা বিশ্বে এই অশান্ত, অস্থিতিশীলতা শ্রেণি ও বর্ণবৈষম্য দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার একমাত্র উপায় হচ্ছে রসুল (সা.)-এর অনুসরণ ও আনুগত্য।

মহানবী (সা.)-এর সুন্নাহর আদর্শ সর্বজনীনতায় দিগন্তবিস্তৃত। আমরা যদি এ দিকগুলোর বাস্তবায়নে দৃষ্টি দিই, তাহলে দেখব রসুল (সা.) তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণের মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ফলে অল্পকালের মধ্যেই ইসলামী সভ্যতা সংস্কৃতির শীর্ষচারী অবস্থান মানবজাতি প্রত্যক্ষ করেছে। এ জয়যাত্রার আওতায় যেসব জনপদ এসেছে, সেসব এলাকার জনসাধারণ মহানবীর অনুসারীদের সালাম জানিয়ে গ্রহণ করেছে। যুগ যুগ ধরে, শতাব্দীর পর শতাব্দী কাল পরিক্রমায় যে মানুষ শোষিত-বঞ্চিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত ছিল, তাদের শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার-নিপীড়নের অবসান ঘটল। সৃষ্টি হলো ধর্ম-বর্ণ এবং আর্থ-সামাজিক শ্রেণি— নির্বিশেষে সানন্দ সহাবস্থানের মানব পরিবেশ, বাস্তবে সর্বজনীনতা।

পবিত্র কোরআনে যত সুন্দর, সত্য, সততা, মানবতা ও কল্যাণময় গুণাবলির কথা বলা হয়েছে, তার নিখুঁত নিখাদ ও পরিপূর্ণ চিত্রায়ণ ঘটেছিল রসুল (সা.)-এর জীবনাদর্শে। মানবসমাজের উন্নতি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আর্থিক ও চারিত্রিক সব ক্ষেত্রে গৌরবময় উত্তরণের পথই হলো অনুসরণীয় আদর্শ। আদর্শহীন কোনো জনগোষ্ঠী পৃথিবীতে সমাদৃত হতে পারে না। তাই আজকের এই করুণ ও অবক্ষয় মুহূর্তেও যদি মুসলিম উম্মাহ ফিরে পেতে চায় তাদের হারানো অতীত, তাহলে তাদের অনুসরণ করতে হবে প্রিয়নবী (সা.)-এর সিরাত বা পবিত্র জীবনচরিত। সুতরাং সেই পথেই হোক আমাদের নবযাত্রা। আদর্শিক প্রত্যয়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক আমাদের সমাজজীবন।

 

লেখক : শিক্ষক, রসুলপুর জামিয়া ইসলামিয়া, ঢাকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads