• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

১৬ টাকার লবণ ৩৮ টাকা

ব্যবসায়ীদের কারচুপি বন্ধ করুন

  • প্রকাশিত ১১ নভেম্বর ২০১৮

আমরা সবাই জানি, দৈনন্দিন জীবিকায় খাদ্যপণ্যের মধ্যে লবণ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যেটি ছাড়া খাদ্য তৈরি অনেকটা অসম্ভবই বলা চলে। আর লবণ ছাড়া খাদ্য তো স্বাদহীন-ই বলা চলে। খাদ্যপণ্য ছাড়াও চামড়াজাত শিল্প ও অন্যান্য কাজেও লবণের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার। এই লবণের বাজারেই এখন চরম অস্থিরতা তৈরি করেছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। বাজারে ১৬ টাকার লবণ এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়। গতকাল দৈনিক বাংলাদেশের খবরে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা গেছে, উৎপাদনকারী নয়- মধ্যস্বত্বভোগী ও করপোরেট ব্যবসায়ীদের কারচুপিতে সাধারণ ক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ।

প্রকাশিত সংবাদের বিবরণে জানা যায়, ৬ টাকা কেজির অপরিশোধিত লবণ সনাতন পদ্ধতিতে ৪ টাকা খরচ করেই বিক্রি করা যায় ১৪ টাকায়। আবার উন্নত প্রক্রিয়ায় ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধনের পর আয়োডিনযুক্ত ও প্যাকেটজাত করলে কেজিপ্রতি খরচ পড়বে আরো ৬ টাকা। কিন্তু সব মিলিয়ে ১৬ টাকার লবণ বিভিন্ন কোম্পানি বাজারে বিক্রি করছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায়। আশ্চর্যের বিষয় হলো, অসাধু বিক্রেতারা বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিলেও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।

দেশে লবণের চাহিদা বছরে ২০ লাখ টন। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১৪ লাখ টন। যার কারণে সরকার বিদেশ থেকে গত দুই বছরে সাড়ে সাত লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়। আমদানির পরও লবণের চড়া মূল্য অব্যাহত রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। আরো বিস্ময়কর খবর হলো, লবণ উৎপাদনে তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে সরকারের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প (বিসিক)। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তাদের নয়। এতেই বোঝা যায় পণ্যটি নিয়ে কী পরিমাণ তুঘলকি করছেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণ লবণকে আয়োডিনযুক্ত করতে বাড়তি খরচ হয় মাত্র ৬ টাকা। সাধারণ লবণকে আয়োডিনযুক্ত করতে অপচয়, পরিবহন ও অন্যান্য বাড়তি খরচ দেখিয়ে দেশের ৩০টি কোম্পানি এই অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ৮০ শতাংশ লবণের বাজারই তাদের দখলে।

সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন— এসব কোম্পানির দেওয়া তথ্য সঠিক নয়। সাধারণ লবণের উৎপাদন খরচ ৬ টাকা। অন্যান্য খরচ মিলিয়ে আয়োডিনযুক্ত ভ্যাকুয়াম করে ১৬ টাকায় হয়ে যায়। কিন্তু দেশের ৩০টি লবণ বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত লবণের দাম নিচ্ছে, যা প্রকাশ্য ডাকাতির মতো ঘটনা।

সরকারের দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যে চরম উদাসীন, লবণের এই চড়া মূল্যই তার প্রমাণ। অতি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্য নিয়ে এই জালিয়াতি শিগগির বন্ধ করা হোক। বিশেষ করে দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের এই অতিরিক্ত অর্থ  বেহাত কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। যত দ্রুত সম্ভব লবণের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হোক।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads