• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

পল্টনে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ

চাই সহনশীল পরিবেশ

  • প্রকাশিত ১৬ নভেম্বর ২০১৮

গত ১৪ নভেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মনোনয়ন বিক্রির জনসমাগমে ঘটে গেছে অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘর্ষের ঘটনা। দুপক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় পুলিশসহ আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ। বিক্ষুব্ধ জনতা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারো এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা দেশের সচেতন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। এই ঘটনায় পুলিশ ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করছে।

রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পালন যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার, তেমনি সাধারণ মানুষের নির্বিঘ্ন যাতায়াত বা দৈনন্দিন শৃঙ্খলা রক্ষা করারও আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বুধবার নয়াপল্টনে যে অজুহাতে ঘটনাটির সূত্রপাত, তা নিতান্তই তুচ্ছ ব্যাপার। এ ঘটনা থেকে এমন ক্ষোভ-বিক্ষোভে জ্বালাও-পোড়াও বা হামলার ঘটনা অনভিপ্রেত। মনোনয়ন জমাদানকে ঘিরে কর্মী সমাগম হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। আবার সাধারণের জন্য গণপরিবহন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার বিষয়টিও যানজটের শহরে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিয়ে সড়কের একটি লেন চালু রাখার চেষ্টা করে। পুলিশের আহ্বানে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীরা সাড়া না দেওয়ায় একপর্যায়ে লাঠিপেটা করতে গেলেই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। এরপর যা ঘটল তা অনাকাঙ্ক্ষিত। এই ঘটনায় বিএনপি কর্মীদের প্রতি পুলিশের অসহিষ্ণু আচরণ, আবার পুলিশের প্রতি বিএনপি কর্মীদের অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্যের ঘটনাই ফুটে উঠেছে। যা সচেতন দেশবাসী প্রত্যাশা করেনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশে যখন উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে ঠিক এই সময়ে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আনন্দে বিষাদের মতোই হলো। ঘটনাটি ঘিরে চলছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। বিএনপি বলছে এটি সাবোটাজ। পুলিশ বলছে, এ ঘটনা পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা তিনটি মামলা করেছে, গ্রেফতার করেছে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে। যা  উদার, সহনশীল ও সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চার ক্ষেত্রে অন্তরায়।

তা ছাড়া ক্ষোভ-বিক্ষোভের নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা কেমন সংস্কৃতি! জনগণের টাকায় কেনা রাষ্ট্রীয় সম্পদ কেন এভাবে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হবে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ধ্বংসাত্মক আগুন সংস্কৃতির দুষ্কৃতকারীরা কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সহনশীল রাজনীতি চর্চায় সবাইকে দেশের স্বার্থে ছাড় দিতে হবে। রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশ কেন রাজনৈতিক দলের প্রতিপক্ষ হবে। এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশের যতটুকু সহনশীল আচরণ করা দরকার পুলিশ তা করেছে কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে। একটি রাজনৈতিক হট্টগোল থেকে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে সাধারণের শান্তি ভঙ্গ করার অধিকার কারো নেই। আমরা চাই গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহনশীল আচরণ করবে। একইভাবে কর্মসূচি পালনে রাজনৈতিক দলগুলোও জননিরাপত্তা, শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে তাদের কর্মসূচি পালন করবে। দেশের অগ্রগতিতে বিঘ্ন ঘটায়- এমন কোনো কর্মসূচি বা সুযোগ যেন কেউ নিতে না পারে সে দিকে খেয়াল রেখেই আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads