• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

ধূলি দূষণের মাত্রা বেড়েছে

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কেন অবহেলা

  • প্রকাশিত ১৮ নভেম্বর ২০১৮

বিশুদ্ধ বায়ু ও নির্মল পরিবেশ যেন রাজধানীবাসীর স্বপ্নই থেকে গেল। বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এসবের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও তার প্রতিফলন বাস্তবে দেখা যায় না। বিশাল বাজেটের সরকারি অর্থ কাগুজে প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন দেখিয়ে লোপাট হয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে দেশের রাজধানী ও অন্যান্য নগরীতে বেড়ে যায় ক্ষতিকর ধূলিকণা ও যৌগ গ্যাসের মাত্রা। নগরবাসীকে এই ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সিটি করপোরেশনগুলোর নগরে নিয়মিত পানি ছিটানোর কথা থাকলেও বাস্তবে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

পরিবেশ অধিদফতরের আওতাধীন ‘টেকসই বায়ু ও নির্মল পরিবেশ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকার বাতাসে প্রতিদিনের বায়ু মানের সূচক পরিমাপ করা হয়। এসব মহানগরের বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার মধ্যে যেগুলোর ব্যাস ১০ মাইক্রোমিটার, সেসব বস্তুকে পার্টিকুলার মেটার (পিএম)-১০ এবং যেসব বস্তুকণার ব্যাস দুই দশমিক পাঁচ মাইক্রোমিটার, সেগুলোকে পার্টিকুলার মেটার (পিএম)-২.৫ এই দুই ভাগে ভাগ করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হয়।

দৈনিক বাংলাদেশের খবরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্যে জানা যায়, পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, গত কিছুদিন থেকে রাজধানী ঢাকার বাতাসে ধূলিকণার চরম ক্ষতিকর মাত্রার উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা রাজধানীবাসীর জন্য দুঃসংবাদ।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সিটি করপোরেশন দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটালে এই ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেত। প্রকাশিত সংবাদের বিস্তারিত বিবরণে আরো জানা যায়, গত বছর নভেম্বরে রাজধানীর পাঁচ অঞ্চলে দিনে দুবার পানি ছিটাতে ৯টি ওয়াটার বাউজার মেশিনের উদ্বোধন করেছিলেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। ঘোষণা ছিল, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এবং দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত পাঁচটি অঞ্চলে পানি ছিটানো হবে। কিন্তু সাংবাদিকদের দীর্ঘ অনুসন্ধানে সিটি করপোরেশনের পানি ছিটানোর কোনো নমুনাই পাওয়া যায়নি। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্টরা যানজট আর বিভিন্ন অজুহাতে রাতে পানি ছিটানো হয় বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা মিথ্যা বলছেন।

নগরবাসীর প্রতি সিটি করপোরেশনের এমন অবহেলা আর ঔদাসীন্য সত্যিই দুঃখজনক। যেখানে খাদ্যপণ্যের ভেজালের বাজারে নগরজীবনের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, সেখানে ক্ষতিকর মাত্রার এই বায়ুদূষণ রাজধানীর মানুষ ও অন্যান্য প্রাণিকুলের জীবনকে আরো ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, দেশের অন্যান্য নগরীতেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এমন ক্ষতির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সিটি করপোরেশনের যাবতীয় ট্যাক্স দিয়ে জীবন যাপনের অতিরিক্ত ব্যয় নির্বাহ করেও নগরবাসী কেন এই স্বাস্থ্য সুরক্ষার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে? জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলমান এসব সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের সঙ্গেই জোচ্চুরি করছেন বলে মনে করছে নগরবাসী। আমরা চাই রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য নগরীর নগরবাসীর প্রতি এমন ঔদাসীন্য বন্ধ হোক। নাগরিকের প্রাপ্য অধিকারের প্রতি সম্মান রেখে নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সিটি করপোরেশনগুলো যথাযথ দায়িত্ব পালন করুক, আমরা সেটাই প্রত্যাশা করি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads