• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

সম্পাদকীয়

দাম নেই আমন ধানের

কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করুন

  • প্রকাশিত ২৮ নভেম্বর ২০১৮

এখনো কৃষিই আমাদের দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। সুতরাং দেশের উন্নয়নকে স্থায়ী করতে কৃষি খাতে যে ধরনের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ প্রয়োজন ছিল তা পরিলক্ষিত হয় না। তাই এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার পরও কৃষক তার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ধান বিক্রি করতে গিয়ে উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দাম পাচ্ছেন। গতবারের তুলনায় এবার সরকারের আমন চাল সংগ্রহের আওতায় দাম কমানোর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। লোকসানের আশঙ্কায় ব্যবসায়ী ও চালকল মালিকরা কমিয়ে দিয়েছেন ধানের দাম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, অনুকূল আবহাওয়া, সরকারি প্রণোদনা ও মাঠপর্যায়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণের কারণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার সারা দেশে ৫৫ লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আর কৃষি মন্ত্রণালয় চলতি মৌসুমে প্রতি কেজি আমন ধানের উৎপাদন ব্যয় ধরেছে ২৫ টাকা ৩০ পয়সা এবং চালের উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণ করেছে ৩৭ টাকা ৯০ পয়সা। যাতে গত বছরের তুলনায় প্রতি কেজি ধানে ৬৭ পয়সা ও চালে ৮৮ পয়সা উৎপাদন খরচ বেড়েছে। অথচ খাদ্য মন্ত্রণালয় গত বছরের তুলনায় প্রতি কেজিতে ৩ টাকা কমিয়ে ৬ লাখ টন আমন চাল সংগ্রহের পরিকল্পনাহেতু প্রতি কেজি চালের দাম ধরেছে ৩৬ টাকা। চাল সংগ্রহের দাম গত বছরের তুলনায় কম নির্ধারণ হওয়ার প্রভাব পড়েছে বর্তমান বাজারে।

লক্ষ করলে দেখা যায়, শুধু ধান নয়, শাক-সবজিসহ যে কোনো কৃষিপণ্যই বিক্রিতে কৃষক নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় প্রায়ই। আর এই ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হতে চলেছে দেশের কৃষক। মধ্যস্বত্বভোগী, ফড়িয়া-দালাল ব্যবসায়ীদের তৈরি সিন্ডিকেটের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই কৃষকসমাজ ক্রমশ নিঃস্ব হতে চলেছে। যদিও খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে যে, কৃষি মন্ত্রণালয় নির্ধারিত উৎপাদন খরচের সঙ্গে তাদের নির্ধারিত উৎপাদন খরচের পার্থক্য থাকলেও তারা বাজার পর্যবেক্ষণ করেই এ দাম ধরেছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বর্তমান মূল্যে ধান বিক্রি করলে মুনাফা তো দূরের কথা, উঠছে না কৃষকের খরচটুকুও। এ অবস্থায় ধান তুলে ঘরে ফেলে রেখেছেন অধিকাংশ কৃষক। তা ছাড়া শ্রমিকের মজুরি দিতে না পারায় এখনো অনেক ধান রয়ে গেছে জমিতে। আবার অনেকে বাধ্য হয়ে বাকিতে ধান বিক্রি করে টাকার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

দেশের কৃষক বাঁচাতে এবং খাদ্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সবার আগে প্রয়োজন মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়া-দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধসহ অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া। কার্যত এ বিষয়ে কারোরই কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। এমতাবস্থায় সরকারি চিনিকলগুলোতে আখচাষিদের কাছ থেকে যেভাবে সরাসরি সরকারি মূল্যে আখ সংগ্রহ করা হয় এবং মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে দাম পরিশোধ করা হয়, ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রেও তেমন উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। উপরন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক বর্গাচাষি। ধানসহ যেকোনো কৃষিপণ্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মহাজনের দাদনের টাকা সুদ-আসলসহ পরিশোধ করতে বাধ্য হয়। এমতাবস্থায় যদি প্রান্তিক পর্যায়ে খাদ্য গুদাম নির্মাণ করা যায়, তাহলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য উপযুক্ত মূল্যে সময়মতো বিক্রি করে দায়দেনা শোধ করে ন্যায্যমূল্য পেত। আশা করি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখবে। 

                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                       

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads