• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বাড়ছে অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালান

অবৈধ অস্ত্র

সংরক্ষিত ছবি

সম্পাদকীয়

সীমান্তের রুটগুলো বন্ধ করা জরুরি

বাড়ছে অবৈধ অস্ত্রের চোরাচালান

  • প্রকাশিত ২৯ নভেম্বর ২০১৮

অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতা অনেক বেড়েছে দেশে। গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে যাচ্ছে এসব অস্ত্র। টাকা দিতে পারলে এসব পাওয়া কোনো সমস্যা নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করলেও অস্ত্র চোরাচালানিদের এই অবৈধ ব্যবসা থেমে নেই। তবে বেশিরভাগই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।

গতকাল দৈনিক বাংলাদেশের খবরে ‘সীমান্তের অর্ধশত পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে আগ্নেয়াস্ত্র’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হাতেও প্রচুর অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। সীমান্তের প্রায় ৫০টি রুট দিয়ে নিয়মিত বিপুলসংখ্যক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দেশে ঢুকছে। সাগরপথেও উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন জেলায় আসছে এই অবৈধ অস্ত্র। বিষয়টি খুবই শঙ্কাজনক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনই উদ্যোগ না নিলে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দুষ্কৃতিকারীরা সশস্ত্র ক্যাডারদের দিয়ে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাবে।

প্রকাশিত সংবাদের তথ্যে গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতিতে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য দেশে ঢুকছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পুঠিয়া, বাঘা, চারঘাট এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর, শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর সীমান্ত দিয়ে এসব আগ্নেয়াস্ত্র দেশে প্রবেশের পর বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া স্থল ও নৌপথেও ভারত বা মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধ অস্ত্রের চালান আসে।

বাংলাদেশে পাচারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট অস্ত্র কারখানা গড়ে উঠেছে। পুলিশ-র্যাব-বিজিবির হাতে প্রায়ই অস্ত্রের চোরাচালান ধরা পড়ে। তারপরও অস্ত্রের চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। সীমান্ত এলাকার প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি অস্ত্রের চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রতিবেদনে জানা গেছে। রাজনৈতিক খুঁটির জোরও আছে তাদের। ফলে কখনো চালানসহ বাহক ধরা পড়লেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে কিছু সিন্ডিকেট। তাদের সংখ্যা ১২৭ বা ১৩৫। ভারত ও মিয়ানমার থেকে অস্ত্র আনে এরা। মিয়ানমার থেকে উখিয়া ও টেকনাফ দিয়ে প্রচুর চালান আসে। এসব অস্ত্র আনতে মাছের ট্রলারও ব্যবহার করা হয়। চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় দেশি প্রযুক্তিতে তৈরি অস্ত্রও সরবরাহ করে তারা। এলজি, পিস্তল, পাইপগান, বন্দুক, একে-৪৭, এম-১৬ প্রভৃতি অস্ত্রের সরবরাহ হয় এসব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অস্ত্রও আসছে এসব চোরাকারবারির মাধ্যমে। চিহ্নিত রুটগুলো বন্ধ করতে না পারায় দেশে অবৈধ অস্ত্রের মজুত বাড়ছে। প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে দেশে। এগুলোর ৯০ শতাংশই ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্যাডার ও আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসীরা। ১০ শতাংশ অস্ত্র চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই প্রভৃতি অপরাধ সংঘটনে ব্যবহার করা হয়।

দেশ এখনো জঙ্গিবাদী প্রবণতা থেকে মুক্ত হয়নি। সামনে জাতীয় নির্বাচন। অবৈধ অস্ত্র জঙ্গি-সন্ত্রাসী বা রাজনৈতিক ক্যাডারদের হাতে থেকে গেলে বড় বিপত্তির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। এসব উদ্ধার করা এখন জরুরি। সব অবৈধ অস্ত্র যদি উদ্ধার করা না যায়, চোরাচালান যদি নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক করা যাবে না। আমরা চাই জনমনে স্বস্তি ও শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে সীমান্তের অস্ত্র চালানের রুটগুলো বন্ধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads