• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

সম্পাদকীয়

জাতীয় পার্টিতে গৃহদাহ

রাজনৈতিক শুদ্ধাচার প্রয়োজন

  • প্রকাশিত ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

আদর্শভিত্তিক রাজনীতি, সুশাসন ও দেশের উন্নয়ন হাত ধরাধরি করে চলে। কিন্তু আদর্শচ্যুত রাজনীতির কাছ থেকে সমাজ ও দেশ কিছু আশা করতে পারে না। সদ্যসমাপ্ত দশম জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদরের বিরুদ্ধে কথিত মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির অপসংস্কৃতিকেই পরস্ফুিট করে তুলেছে। জনাব হাওলাদার এ অভিযোগ অস্বীকার করা সত্ত্বেও দলের ভেতরে তার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ক্ষোভ কিছুতেই প্রশমিত হচ্ছে না। জাপার কার্যালয় ভাঙচুর, দরজায় তালা লাগানো তারই বহির্প্রকাশ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুদ্ধাচারের প্রয়োজনীয়তাকে প্রকট করে তুলেছে।

সাধারণ মানুষ আজ তাই আদর্শের রাজনৈতিক শক্তির উত্থান দেখতে চায়, যে রাজনীতি উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের জনগণ সেই আশার আলো দেখার প্রত্যাশা করে। জাতি যখন গত ৫ জানুয়ারির মতো একটি নির্বাচনের আশঙ্কা করছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা নির্বাচনের মাঠে সুবাতাস বইয়ে দিল। সমগ্র জাতির জন্য তো বটেই, সরকারে থাকা ক্ষমতাসীন দলও নির্বাচন কমিশনকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। জাতিকে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার বল এখন তাদের কোর্টে। কিন্তু জাপায় গৃহদাহসহ বিরোধী দলগুলোর রেকর্ডসংখ্যক মনোনয়ন বাতিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

অতীতে স্বার্থান্বেষী রাজনীতির কারণে বার বার জনস্বার্থ উপেক্ষিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে রাজনীতির ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়েছে সাধারণ জনগণ। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আর এর জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আত্মসমালোচনা ও শুদ্ধাচারের প্রয়োজন রয়েছে। জনাব হাওলাদারের এই মনোনয়ন বাণিজ্যে জাতীয় পার্টির অন্য সদস্যদেরও যুক্ত থাকার কথা শোনা যাচ্ছে। সুতরাং সাবেক এই মহাসচিবকে হটিয়ে নতুন মহাসচিব হিসেবে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে জনাব হাওলাদার যেন বলির পাঁঠা না হন, সেদিকেও দৃষ্টি রাখা উচিত।

মূলত বাংলাদেশে আদর্শিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থকেই বড় করে দেখেছে। এমনকি তাদের নিজেদের ভেতরেও আস্থাহীনতার সঙ্কট জাতির ক্রান্তিকালেও দেশবাসীর সামনে উন্মোচিত হয়েছে। ফলে দুর্নীতি, অনৈতিকতা, লুটপাট, দলীয়করণ ও পরিবারতন্ত্রের ফলে গণতন্ত্রহীন চর্চার ভেতর দিয়ে এগিয়ে গেছে এ দেশের রাজনীতি। এখন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে প্রয়োজন রাজনৈতিক শুদ্ধাচার। আর এটি নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর।

আমরা চাই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্যভাবে সম্পন্ন হোক। আর এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের শক্তি-সদিচ্ছা ও নৈতিকতার উদ্বোধন ঘটুক। পাশাপাশি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোও শুদ্ধ রাজনীতির জন্য নিজ দলের ভেতরেও শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করবেন এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত রাখবেন- এটাই কামনা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads