• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

সম্পাদকীয়

এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন

চাই স্বচ্ছ ও সর্বজনীন উদ্যোগ

  • প্রকাশিত ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে দেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করে তুলতে হবে। পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়নকে টেকসই করতে হলে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সর্বজনীন অংশগ্রহণের বিকল্প নেই। মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়াতে পর্যাপ্ত উপযোগী সহায়তা, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্থানীয়দের শ্রমমূল্য ও উৎপাদিত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য পেতে সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। দেশের সুশীল সমাজ, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি ও অক্সফাম আয়োজিত ‘স্থানীয় পর্যায়ে তৃণমূলের এসডিজি ভাবনা’ নিয়ে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সেমিনার ও অর্থনৈতিক সম্মেলনে এসব মতামত উঠে এসেছে।

গত বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে জাতিসংঘ ঘোষিত ১৫ বছর মেয়াদি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নতুন একটি আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছিল। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা না থাকায় বিকল্প হিসেবে একটি কার্যকর প্রতিষ্ঠান গঠনের তাগিদ দেওয়া হয়েছিল সেই সেমিনারে। সেমিনারে বিশিষ্টজনরা বলেছিলেন— নতুন পদ্ধতি এবং নতুন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা উচিত, যাতে নতুন সংস্থাটির মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ করার সামর্থ্য ও ইচ্ছার ওপর এসডিজির প্রতিটি লক্ষ্য অর্জন নির্ভর করে। একক কোনো সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের কাজে এসডিজির সব লক্ষ্য পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যেমন চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তেমনি মানবসম্পদেরও অভাব রয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ যেভাবে সফল হয়েছিল, সময়ের ব্যবধানে এসডিজির চ্যালেঞ্জ তার চেয়ে তুলনামূলক অনেক বেশি। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আঞ্চলিক সহযোগিতাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এসডিজির অভীষ্টগুলো বাস্তবায়নে আঞ্চলিক কাঠামোর উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। ‘সার্ক কার্যকর না হওয়ায় জনপ্রত্যাশার সঙ্গে আমাদের আঞ্চলিক কাঠামোর পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। এই পার্থক্য দূর করার জন্য নতুন ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রয়োজন। সেই কাঠামো জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। এমনকি রাজনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে।’

দক্ষিণ এশিয়ায় বর্তমানে ১৮৪ কোটি মানুষের বাস। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বসবাস এই অঞ্চলে। এখানে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি। তবে বিশ্বের মোট রফতানি আয়ের মাত্র ৪.০৭ শতাংশ আসে দক্ষিণ এশিয়ায়। বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে। আর এর জন্য নতুন জ্ঞানের দরকার, নতুন বিশ্লেষণ দরকার।

নতুন জ্ঞান এবং বিশ্লেষণ নিয়ে নীতিনির্ধারকদের নতুন কর্মপন্থার অনুসন্ধান করতে হবে। দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও অপুষ্টির প্রকোপ চিরতরে নির্মূল করতে হবে। নইলে এসডিজি অর্জন সম্ভব নয়। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকারের ভূমিকাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রত্যাশা করি— একটি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু পরিকল্পনায় এসডিজি অর্জনে সর্বজনীন পদক্ষেপ গৃহীত হলে এই লক্ষ্য অর্জন মোটেও অসম্ভব নয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads