• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

নির্বাচনী ইশতেহার

চাই বাস্তবসম্মত অঙ্গীকার

  • প্রকাশিত ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

রাজনৈতিক ইশতেহারে গুণগত মান নিশ্চিতে সংস্কারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক অনুষ্ঠানে। সেখানে বিভিন্ন বক্তার আলোচনায় উঠে আসে যে, টেকসই ও গুণগত উন্নতি নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সংস্কারে হাত দিতে হবে। বর্তমান উন্নতি মূলত বিভাজিত উন্নয়নের ফল। যার দরুন প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও সামাজিক নিরাপত্তায় উন্নতি হয়েছে কেবল সংখ্যা ও পরিমাণের বিচারে। গুণগত মানের বিচারে আগের অবস্থানেই রয়েছে অর্থনীতি। সুতরাং আর্থ-সামাজিক বৈষম্য রুখতে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে। নতুবা আগামীর তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর পৃথিবীতে আজকের প্রজন্মকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করা দুষ্কর হয়ে পড়বে।

রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের ইশতেহারের পরিবর্তে একুশ শতকের পৃথিবীতে টিকে থাকতে দেশ ও জাতি গঠনে কার্যকর প্রতিশ্রুতি এখন প্রয়োজন। তাই ইশতেহারে অযাচিত প্রতিশ্রুতি পরিহার করে বাস্তবসম্মত অঙ্গীকার কীভাবে পূরণ করা যাবে, তা বাস্তবায়নে অর্থের উৎস কী হবে- এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেশবাসী জানতে চায়। তথ্যপ্রযুক্তি ও অর্থনীতিনির্ভর এই পৃথিবীতে তাই প্রয়োজন দেশের যুবসমাজকে সঠিক কর্মপন্থায় উদ্বুদ্ধ করা এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা। মনে রাখতে হবে, বছর বছর উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদেরকে উৎপাদনমূলক কাজে সম্পৃক্ত করা না গেলে জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে আমরা পিছিয়ে পড়ব। সুতরাং কেবল বড় প্রতিষ্ঠান নয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। কেননা, এসব প্রতিষ্ঠানে বেশিসংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাছাড়া অনলাইন, ই-কমার্সের মতো ব্যবসাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, শিক্ষাব্যবস্থাকে উদ্যোক্তা সৃষ্টির উপযোগী করে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

রফতানি-আমদানি সূচকে কিংবা রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়তো আশার সঞ্চার করছে, কিন্তু উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুণগত অবনমন হয়েছে। বিভাজিতভাবে বৈষম্যের ধারা দ্রুততম হয়েছে। এরও কারণ হচ্ছে নতুন উদ্যোক্তা ও কর্মসংস্থানের অভাব। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে এ বিষয়টিতে জোর দেওয়া উচিত। অথচ পাঁচ বছর অন্তর জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ঘোষিত রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে চাকচিক্যময় লোক-ভোলানো কিছু অপরিকল্পিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, যার বাস্তবায়ন দুরূহ হয়ে পড়ে। এখন পর্যন্ত দলগুলোর দেশের অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে কোনো প্রস্তাবনা দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

অর্থনৈতিকভাবে দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের বিকল্প নেই। আর তার জন্য শ্রমঘন শিল্পায়নে প্রাধান্য দিতে হবে। আবার রফতানি বাজারের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারের জন্য শিল্পায়ন প্রয়োজন। কৃষিভিত্তিক শিল্পায়ন ঘটাতে হবে। তাকে এগিয়ে নিতে কৃষিপণ্যের প্রণোদনা জরুরি। তাছাড়া লাইভস্টক ও ফিশারিজে সম্ভাবনা সৃষ্টির মাধ্যমে তাকে কাজে লাগাতে হবে। আগামীর বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে গালভরা বুলির পরিবর্তে উক্ত বিষয়গুলোর বাস্তবসম্মত অঙ্গীকার থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছি। পাশাপাশি গণতন্ত্র, সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিজেদের দলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক শুদ্ধাচারও দরকার। দেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালের এই নির্বাচনে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এমন একটি ইশতেহার দেশের সাধারণ মানুষ আশা করতেই পারে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads