• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

নির্বাচনের মাঠে সেনাবাহিনী

পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে হবে

  • প্রকাশিত ২২ ডিসেম্বর ২০১৮

প্রতিদিনই জাতীয় দৈনিকগুলোর শিরোনাম হচ্ছে নির্বাচনী সহিংসতার খবর। প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, প্রচারে বাধা ইত্যাদি এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের আশাকে করেছে দূরীভূত। এ অবস্থায় বিশেষত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আস্থা রাখতে চাচ্ছে সেনাবাহিনীর ওপর। তারা এও দাবি করেছে যে, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিতে হবে। এ কথা সত্য, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ ও জাতির প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত তারা প্রসারিত করেছে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রুখে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছিল বিধায় আজ আমরা স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে ঠাঁই পেয়েছি। দেশ গঠনেও তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তেমনি বিশ শতকের শেষ দিকে পৃথিবীব্যাপী দেশে দেশে যে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, খরা, জলোচ্ছ্বাস— নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও আমাদের সেনাবাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করে চলেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ও কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাফল্য আজ বিশ্বে সম্মানিত।

বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে আমাদের সেনাবাহিনী যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে চলেছে এবং জঙ্গি নির্মূলে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে চলেছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। এক্ষেত্রে দেশের ভাবমূর্তি উন্নয়ন ও শান্তি বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রাণ উৎসর্গ করতেও তারা দ্বিধাবোধ করেননি। দেশরক্ষায় তাদের এই বীরত্বগাথা মুক্তিসংগ্রামের মতোই চিরজাগরূক হয়ে থাকবে। আর সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়নে বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগকেও সাধুবাদ জানাতে হবে বৈকি! একটি দেশের আধুনিক সেনাবাহিনী প্রমাণ করে তার পেশাদারিত্ব। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেই লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। তাদের পেশাদারিত্ব বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে মহিমান্বিত করেছে।

একটি নির্ভুল নির্বাচন পরিচালনায় আজ তাই নির্বাচন কমিশনের পাশে সেনাবাহিনীকে প্রয়োজন। দেশবাসীও তা উপলব্ধি করছে। জাতির এ সংকট মুহূর্তে সেনাবাহিনীকেও পেশাদারিত্ব বজায় রেখে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে নির্বাচনের মাঠে কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে। মধ্য ডিসেম্বরে সেনাবাহিনী নামার কথা নির্বাচন কমিশন জানালেও এখন তা আগামী ২৪/২৫ তারিখে নামানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ইতোমধ্যে উপর্যুপরি নির্বাচনী সহিংসতা জনমনে শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রে নির্বিঘ্নে যেতে পারবে কি-না, সে বিষয়ে দ্বিধান্বিত রয়েছে। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সেনাবাহিনী একটি অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে আমাদের সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয় এবং গড়ে ওঠে। স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের সেনাবাহিনী সীমিত সম্পদ আর স্বল্প লোকবল নিয়ে যাত্রা শুরু করেও আজ একটি পেশাদার বাহিনীতে রূপ নিয়েছে। ধাপে ধাপে এর উন্নয়ন ঘটেছে। দেশ গঠনেও সেনাবাহিনীর রয়েছে উল্লেখযোগ্য অবদান। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দৈবদুর্বিপাক ও দুঃসময়ে সেনাবাহিনী আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছে। রাষ্ট্রের সঙ্কটময় মুহূর্তে আমরা তাদের পাশে পেয়েছি। আজ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অতীতের মতো তাদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা জাতি প্রত্যাশা করে। দেশবাসী আশা করে, আগামীতেও সেনাবাহিনী তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে কৃতিত্বের সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads