• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

হুমকিতে জীবন-জীবিকা

নদী খনন ও শাসন জরুরি

  • প্রকাশিত ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৮৮টি নৌপথে নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। পানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য ডুবোচরের কারণে এসব নৌপথ এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে  উঠেছে। এর মধ্যে ৫৭টি নৌপথে ঝুঁকি নিয়ে চলছে দাতলা লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান। বাকি ২৭টি নৌপথ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতেই নদ-নদীতে নাব্য সংকটের খবর প্রকাশিত হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেশের নদ-নদীতে নাব্য সংকটের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন— সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল হলে এ সংকট সৃষ্টি হয় না। অথচ দেশের মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে নদ-নদীর অস্তিত্বের সঙ্গে। নদী মরে যাওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে কৃষি, মৎস্যসহ দেশের অর্থনীতিতে। একই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। জেলেদের জীবন-জীবিকা পড়েছে মারাত্মক সংকটের মধ্যে। এ ছাড়া নদীর ওপর নির্ভরশীল কৃষক ও লঞ্চ, স্টিমারসহ ছোট-বড় অনেক নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। নদীর এমন দুর্দশায় লাখ লাখ মানুষের দিশাহারা হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক।

বিশেষজ্ঞ মতামত আর সংবাদ বিশ্লেষণে জানা যায়— প্রথমত, কিছু প্রাকৃতিক কারণে নদ-নদীর নাব্য হারাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের অপরিণামদর্শী আচরণও নদীকে সঙ্কুচিত করছে দিন দিন। যেমন- সমাজের একশ্রেণির প্রভাবশালী মহল প্রতিনিয়ত নদীর পাড় দখল করছে। নদীর মাটিসহ প্রাকৃতিক সম্পদ যথেচ্ছাচারভাবে ব্যবহার করছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে মাছের ঘের, বাঁশ ও করাত কলের বড় বড় কাঠের ফাইল নদীতে ফেলে নদীর আশপাশ দখল করে রেখেছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত ৪০ বছরে ১৮ হাজার কিলোমিটার নৌপথ হারিয়ে গেছে। দূষণ-দখল ছাড়াও নিয়মিত নদী খনন না করাকে এ জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই দায়সারা গোছের কাজ না করে সমন্বিত ও পরিকল্পিত উপায়ে খনন তথা বৃহৎ বা গভীর খনন করতে হবে। নদী রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা গত ১০ বছরে প্রায় ৪০ দফা অভিযান চালিয়েছে। উচ্ছেদ করা হয়েছে সাড়ে আট হাজারেরও বেশি অবৈধ স্থাপনা। মামলা, গ্রেপ্তার, জরিমানাসহ নানা রকম শাস্তিও দেওয়া হয়েছে দখলদারদের। এরপরও কি দখলদারদের দৌরাত্ম্য কমেছে? ড্রেজিং ও নদীশাসনের মাধ্যমে নদীগুলোর নাব্য রক্ষা করার কার্যকর উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করা না গেলে জীববৈচিত্র্যসহ মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর এর স্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব আরো ভয়াবহ হতে পারে।

শুধু তাই নয়, এর অশুভ প্রতিক্রিয়ায় দেশের মানচিত্র থেকে চিরতরে হারিয়ে যাওয়া নদীর তালিকা দীর্ঘ হবে। নদ-নদীর এই হতদশা ও নাব্য সংকট দূর করতে হলে আগে নদীগুলো থেকে অবৈধ দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে হবে। নদী দখল ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী খননের ব্যাপারে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের জীবন ও প্রকৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য। প্রাণ-প্রকৃতির জীবীকার সঙ্গে নদ-নদীর সম্পর্ক প্রাণের। নদ-নদী নেই তো প্রাণ-প্রকৃতি নেই। তাই নদ-নদীকে বলা হয় জীবন প্রণালী বা লাইফ লাইন। মানুষসহ সব জীবের অস্তিত্ব ভালো রাখতে হলে নদ-নদীতে প্রাকৃতিক গতিতে সচ্ছ ও স্বাভাবিক রাখতে হবে, নইলে চরম হুমকির মুখে পরবে নদীমাতৃক বাংলার জীবন ও জীবীকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads