• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করুন

জাপানে নতুন শ্রমবাজার

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

জাপানে নতুন শ্রমবাজার

বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত করুন

  • প্রকাশিত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮

সূর্যোদয়ের দেশ হিসেবে খ্যাত জাপান আগামী এপ্রিল থেকে বিদেশি শ্রমিকদের জন্য দরজা খুলছে। প্রাথমিকভাবে যে ৮টি দেশ থেকে তারা শ্রমিক নেবে, সেখানে বাংলাদেশের নাম নেই। অন্যতম বৃহৎ জনশক্তির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এটি সুখকর নয়। ইতোপূর্বে সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলামও বলেছিলেন, নতুন শ্রমবাজার খোঁজার প্রেক্ষাপটে জাপান ও রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু আগে থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরও জাপান সরকারের ৮ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়া দুঃখজনক। অবশ্য টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস জোর কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে যা আমাদের আশান্বিত করছে।

তবে এ কথা সত্য, বর্তমান সরকারের আমলে বিদেশে পাঠানো কর্মীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি দেশের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ১৬৫টি দেশে তার জনশক্তি রফতানি করছে। আর গত দশ বছরে বিদেশে শ্রমিক পাঠানো হয়েছে মোট ৫১ লাখ ৯৮ হাজার ৯১৪ জন। এর মধ্যে গত বছর রেকর্ডসংখ্যক ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ কর্মী বিদেশে যান, যা ছিল আগের বছরের তুলনায় ২ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৪ জন বেশি। এটি সম্ভব হয়েছে ২০১৬ সালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান আইন সংশোধনের ফলে। ওই আইনে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার নির্দেশনা, অভিবাসীদের সুরক্ষা, স্ব-স্ব দেশের শ্রমবাজার সম্পর্কে পর্যালোচনা রিপোর্ট দেওয়া এবং নতুন শ্রম শাখা খোলার নীতি গ্রহণ করা হয়। উল্লেখ্য, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেই অভিবাসন সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা রয়েছে। আমরা মনে করি, সরকারের এসব যুগান্তকারী পদক্ষেপ বিদেশে আমাদের জনশক্তি রফতানিতে অগ্রগতি এনেছে। যার ফলে আমরা বর্তমানে নারীশ্রমিকও বিদেশে বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি।

পাশাপাশি এটাও ভাবতে হবে, এর মাধ্যমে শুধু প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিই লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়, বরং আমাদের শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নতুবা মধ্যপ্রাচ্য থেকে অসহায় অবস্থায় আমাদের নারীশ্রমিকদের ফিরে আসতে হতো না। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গৃহশ্রমিক, নার্স, পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে নারীশ্রমিক পাঠানো হলেও তাদের একটি অংশকে দেহব্যবসায় বাধ্য করা হয়। ফলে নারীশ্রমিকদের একটি ব্যাপক অংশ গত বছর ফেরত আসে। এক্ষেত্রে যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে একটি অবৈধ সংঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে মিলে নারী পাচার করছে, সেসব এজেন্সি চিহ্নিত করে তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ আইনের আওতায় আনা জরুরি বলে আমরা মনে করছি। উপরন্তু দক্ষ শ্রমিক প্রেরণ ও আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে। আর সে কারণেই জাপানে শ্রমিক প্রেরণের পূর্বশর্ত হিসেবে আমাদের শ্রমিকদের জাপানি ভাষা শিক্ষায় এখনই মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। আশা করি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেবেন।

বাংলাদেশের অধিক জনসংখ্যা মানবসম্পদ হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। কিন্তু এই জনশক্তিকে যদি দক্ষ করে গড়ে তোলা যায়, তাহলে জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা এগিয়ে থাকব। এশিয়ার উন্নত ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশ জাপানে নতুন শ্রমবাজার আমাদের অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করবে। তাই এ নতুন শ্রমবাজার হারালে চলবে না। আমাদের জোর কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। আগামী নির্বাচিত সরকার সেদিকেই নজর দেবে আশা করি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads