• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

শেখ হাসিনা ও মাহাথির

ফাইল ফটো

সম্পাদকীয়

মাহাথীর আর শেখ হাসিনা

মাহাথীরের মালয়েশিয়া শেখ হাসিনার বাংলাদেশ!

  • আসিফ উল আলম সোহান
  • প্রকাশিত ০৯ জানুয়ারি ২০১৯

১৯৮১ সালে মাহাথীর মোহাম্মদ যখন মালয়েশিয়ার দায়িত্ব নেন, সে বছর দেশটির গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাকশন (জিডিপি) ছিল মাত্র ১২ বিলিয়ন ডলার। আর ২০০৩ সালে যখন ক্ষমতা ছাড়লেন, জিডিপি ছিল ২১০ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় ৩০০০ ডলার, দক্ষিন এশিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের দেশ।

আমরা কথায় কথায় মাহাথীরের উদাহরণ টানি। মালেয়েশিয়ার মত উন্নত দেশের উদাহরণ টানি। মাহাথীরের মত নেতা চাই। কিন্তু তার এই দীর্ঘ সাফল্যের রহস্যটা আমরা কতটা জানি? এটা কি মাহাথীর এল, দেখল আর জয় করল? নাহ! মাহাথীরের সাফল্য আর ধারাবাহিক উন্নতির মূল কারণ ছিল ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’।

মাহাথীর যখন মালয়েশিয়ার ক্ষমতায় আসেন, রাজনৈতিক অবস্থা তখন খুবই খারাপ। রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক কথায় ছিলো টোটাল ক্যাওস। হরতাল, মিছিল,মিটিং লেগেই থাকত। ফ্রিডম অফ স্পিচের নামে মানুষ কাজ বাদ দিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকত দলাদলি আর রাজনীতিতে। মাহাথির বিশ্বাস করতেন, এই যে নানা ধর্মের, নানা মতের মালয়েশিয়াকে একটি স্টেবল বানাতে যারা দেশে রাজনীতির নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটায়, গণতন্ত্রের নামে যারা দেশে অরাজকতা করছে, তাদের কে জেলে ঢুকাতে হবে। না হয় এটা বন্ধ সম্ভব নয়। উন্নতি সম্ভব নয়।

যেই ভাবনা সেই কাজ। ১০৬ জন বিরোধী দলীয় নেতাকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দায়ে জেলে ঢুকালেন। কোন আইনে ঢুকালেন? মাহাথীরের পাশ করা অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা আইন বা ‘ইন্টারনাল সিকুয়েরিটি’ দ্বারা। ক্ষোভে ফেটে পড়ল বিরোধী দল এবং মিডিয়াগুলো।

মাহাথীর এবার লাগলেন মিডিয়াগুলোর পেছনে। প্রতিটি প্রাইভেট এবং সরকারি নিউজ পেপারে সেন্সর জারি করা হলো। জাতীয় পর্যায়ে ঝামেলার সৃষ্টি হয় এমন কোন নিউজ করা যাবেনা। তখন হিউম্যান রাইটস গ্রুপ গুলো মাহাথীরকে প্রশ্ন করত, where is our freedom? মাহাথীর উত্তর দিত, ‘Free for whom? For rogue speculators. For anarchists wanting to destroy weak countries in their crusade for open societies.’

এরমধ্যে পশ্চিমা বিশ্ব তখন মাহাথীরের পিছে লেগে গেছে! মালয়েশিয়ার মানুষের মানবাধিকার নাই, ফ্রিডম অফ স্পিচ নাই-কত কি! মালয়েশিয়াতে তখন সিআইএ’র এজেন্ট এনজিওগুলোর কাজই ছিল বিভিন্ন জরিপ, প্রতিবেদন ইত্যাদি প্রকাশ করে এইটা প্রমাণ করার চেষ্টা করা। মাহাথীর মোহাম্মদ ইজ আ ডিকটেটর। মালয়শিয়ায় কোন গণতন্ত্র নাই। কিন্তু মাহাথীর মোহাম্মদ ভেঙ্গে পড়েননি কোনমতে, কোনচাপে- লক্ষে অবিচল ছিলেন। লক্ষ ছিল একটি পলিটিক্যালি স্টেবল ডেভেলপড মালয়শিয়া। ক্ষমতা গ্রহনের প্রথম দশবছরে মাহাথীরকে ভুল বুঝেছিল নিজ দেশের মানুষও। হিউম্যান রাইটস, ফ্রিডম অফ স্পিচের ধোয়াতে বিশ্বাস করেছিল অনেকেই। কিন্তু মাহাথীর দমে যাননি, শেষ পর্যন্ত সফল হলো লং টাইম প্ল্যানিংই।

পলিটিকাল ইনডিসিপ্লিন মালয়েশিয়া কন্ট্রোল্ড ডেমোক্রেসিতে অপ্রয়োজনীয় রাজনীতি নয়, ব্যস্ত ছিল পরিশ্রমে। কাজ করে আজকের আধুনিক মালেয়শিয়াতে পরিণত করেছে সে দেশের জনগন। এখন আর ফ্রিডম অফ স্পিচের লোকদের খুঁজে পাওয়া যায় না। হারিয়ে গেছে উন্নয়নের স্রোতে।

ঠিক এমনটাই ঘটছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে। ২০০৮ এ যখন ক্ষমতায় আসল বাংলাদেশ তখন শুন্য রিজার্ভের ৬ ঘন্টা লোডশেডিং আর টেকনোলজিলেস বাংলাদেশ। মাহাথীরের সামনে রাজাকারের ফাঁসি ছিলনা। শেখ হাসিনার সামনে ছিল সেই কঠিন দায়িত্ব। মাহাথীরের মালয়েশিয়ায় যেমন দেশকে অস্থিতিশীল করে দেয়ার মত বিরোধীদল ছিল, শেখ হাসিনার বাংলাদেশেও তেমন পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ পোড়ান দল আছে। যে দলকে শেখ হাসিনা শক্ত হাতে সামলেছেন।

মজার ব্যাপার হলো, মাহাথীর মোহাম্মদ মিডিয়া সেন্সর করতেন। কিন্তু শেখ হাসিনার আমলে ৪০টির উপর টিভি চ্যানেল। অসংখ্য অনলাইন সংবাদ মাধ্যম আর পত্রিকাতো রয়েছেই।

মাহাথীর মোহাম্মদ এক সময় মিটিং মিছিল নিষিদ্ধ করেছিলেন। শেখ হাসিনার সরকারের সময় কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, হেফাজতের দাবি তুলতে পারে। সরকার দাবি মেনেও নিয়েছে। সেক্ষেত্রে মাহাথীরের নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র থাকলে, শেখ হাসিনার গণতন্ত্রকে বলতে পারি প্রগতিশীল গণতন্ত্র।

২০০৮ এ দায়িত্ব নিয়ে দিন রাত পরিশ্রম শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন কতটা ভালো আছে সেটা ভোট জোয়ারেই দেখা গেছে। যদিও সেটা অনেকেই মানতে চায় না, তাদের চাওয়া বাংলাদেশের মানুষ কাজকর্ম বাদ দিয়ে স্বাধীন দেশে মিটিং মিছিল জ্বালাও পোড়াও শুরু করুক।

কিন্তু সেটা এখন কাকে বুঝাবেন? মানুষ এখন সারাবিশ্ব দেখে। তারাও স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ একদিন বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ হবে। সেই স্বপ্ন দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। জনগন বুঝে গেছেন, মিছিল মিটিং নয়, পরিশ্রম করতে হবে। দেশের উন্নতিতে নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক পরিবেশে জাতি হিসেবে পরিশ্রমের বিকল্প নাই।

এখনো অনেক দূর বাকী। আমাদের মাহাথীন নয়। একজন শেখ হাসিনা আছেন। যার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটা স্বাধীন দেশ দিয়ে গিয়েছেন। আর তার সুযোগ্য কন্যা আমাদের বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাড়ানোর সাহস দিচ্ছেন। অনেকে নানা কারণে এই মুহূর্তে তাকে ভুল বুঝতে পারেন। কিন্তু একদিন তাদের বোঝা ভুল ভেসে যাবে উন্নয়নের জোয়ারে।

নতুন সরকার গঠন হচ্ছে। এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে দরকার শেখ হাসিনার উপর বিশ্বাস রাখা। যে বিশ্বাস মাহাথীরের উপর রেখেছিল।

জেনে রাখুন, শেখ হাসিনাই পারে, শেখ হাসিনাই পারবে।

লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি ,বাংলাদেশের খবর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads