• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ন্যায্য মজুরি প্রদানে গড়িমসি কাম্য নয়

ন্যায্য মজুরি প্রদানে গড়িমসি কাম্য নয়

সংরক্ষিত ছবি

সম্পাদকীয়

প্রসঙ্গ শ্রমিক আন্দোলন

ন্যায্য মজুরি প্রদানে গড়িমসি কাম্য নয়

  • প্রকাশিত ১১ জানুয়ারি ২০১৯

নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের প্রাক্কালে মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ আন্দোলন বিব্রতকর ব্যাপার বটে। এমন সময় আন্দোলনটি সংঘটিত হচ্ছে যখন একদিকে নতুন মন্ত্রীরা কেবল শপথ গ্রহণ করেছেন, অপরদিকে আগের সরকারের মন্ত্রীরা দায়িত্ব থেকে সদ্য অব্যাহতি পেয়েছেন। এমতাবস্থায় একটি ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে আশ্বস্ত করার পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মহোদয় বিষয়টি সার্বিকভাবে পর্যালোচনা সাপেক্ষে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন এটিই প্রত্যাশিত। তবে এজন্য যে সময়টুকু দেওয়া দরকার, সে বিষয়টিও আন্দোলনকারীদের বিবেচনায় নিতে হবে।

তবে ভাবতে অবাক লাগে, বাংলাদেশে জাতীয় অর্থনীতির চাকা যারা সচল রাখছেন তাদের ন্যায্য মজুরির দাবি আদায়ে পথে নামতে হয়! এটা নির্মম বাস্তবতা। বাংলাদেশ যখন উন্নত দেশের স্বপ্ন সোপানে অগ্রসর হচ্ছে তখন দেশের সকল স্তরের জনগণের মাঝেও উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন থাকাটাও স্বাভাবিক। কিন্তু যাদের রক্তে, ঘামে চলছে পোশাক শিল্প অথবা অন্যসব শিল্প-কারখানা, তাদের জীবনমানের উন্নয়নও সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়টাই যৌক্তিক। মালিকরা যথাযথ নিয়মে শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা প্রদানে অকৃপণ হলে শ্রমিকদের আর আন্দোলনে পথে নামতে হয় না। ব্যাপারটি অত্যন্ত সহজ ও সরল গাণিতিক হওয়া সত্ত্বেও আমাদের শিল্প-মালিকরা কেন শ্রমিকের ন্যায্য দাবি মেটাতে গড়িমসি করেন বুঝতে কষ্ট হয়।

আমরা জানি, আর্থিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে শ্রমিকরা স্বস্তিতে না থাকলে উৎপাদনশীলতায় গতিসঞ্চার হয় না। পণ্যের মানও ভালো হবে না। আর শ্রমিকের মন ও শরীর ভালো রাখার জন্য প্রথমে দরকার আর্থিক সুবিধা বাড়ানো। পাশাপাশি দরকার স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ এবং বিশ্রাম। এ ছাড়া তাদের উদ্দীপনার জন্য দরকার সঞ্চয়ের ব্যবস্থা। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের দেশের অধিকাংশ শ্রমনির্ভর কারখানার মালিকরা এ বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করে চলেন। অপরপক্ষে যেসব মালিক শ্রমিকের সুবিধা ও স্বস্তিময় কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করেছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। এরই ফলে আমরা গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করতে পারি বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশিসংখ্যক পরিবেশবান্ধব (গ্রিন ফ্যাক্টরি) ৬৭টি পোশাক কারখানা রয়েছে। কেবল সর্বোচ্চ সংখ্যক পরিবেশ-বান্ধব কারখানাই নয়, সনদপ্রাপ্ত কারখানাগুলোর শীর্ষস্থানীয় ১০টির সাতটিই বাংলাদেশে। পরিবেশবান্ধব এ ধরনের কারখানার সনদ দেয় যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। তারা লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (এলইইডি) সনদ দেয়। এতে প্রমাণিত হয় মালিকরা আন্তরিক হলে পাল্টে যেতে পারে পোশাক শিল্পের চেহারা। মালিকদের ভালোবাসায় উদ্দীপিত হয়ে পোশাক শিল্পসহ সব শিল্প-কারখানায় উৎপাদনে বিপ্লব ঘটতে পারে। এর ফলে মালিক, শ্রমিক ও দেশের আর্থিক ও মানসিক মর্যাদা বাড়বে বৈ কমবে না।

আমাদের প্রত্যাশা, শ্রমিকের প্রতি মালিকরা সহানুভূতিশীল হয়ে তাদের ন্যায্য দাবি মেনে নেবেন। সর্বশেষ সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রদানে আর গড়িমসি করবেন না। সরকারের পাশাপাশি এ-বিষয়ে পোশাক শিল্পের সংগঠনের নেতাদের দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বরং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, শিল্প সংগঠনের নেতা এবং শ্রমিক প্রতিনিধিদের আলোচনায় সুষ্ঠু সমাধান হোক। আর আশা করব, এমন দাবি আদায়ে শ্রমিকদের কাজ ফেলে ভবিষ্যতে আর পথে নামতে হবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads