• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

সম্পাদকীয়

ভর্তিবাণিজ্যনির্ভর ভুঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠান

শিক্ষাবাণিজ্য বন্ধ হোক

  • প্রকাশিত ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ফি নিলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দিয়েছেন নতুন সরকারের নবনিযুক্ত শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রীর এই সতর্কবাণীর ফলে   প্রত্যাশার পাশাপাশি প্রতিফলনও দেখতে চায় দেশের জনগণ। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত স্কুলগুলোতে চলবে ভর্তি কার্যক্রম। প্রতি বছরই এ সময় স্কুলে ভর্তিযোগ্য সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকের চোখের ঘুম হারাম হয়ে যায়।  কেননা পছন্দের স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করানোই থাকে তাদের লক্ষ্য। আর এই সুযোগে কিছু ভর্তি কোচিং সেন্টার শিশুদের স্কুলে ভর্তির নিশ্চয়তা দিয়ে রমরমা ব্যবসা করে। অপরদিকে রাজধানীর নামিদামি স্কুলগুলোও ভর্তিবাণিজ্যের দায়ে দুষ্ট। ভাবতে অবাক লাগে, রাজধানীতে কিছু নামি বেসরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হলেও প্রশিক্ষিত শিক্ষক এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামো থাকার পরও ভালো শিক্ষার্থী পায় না সরকারি স্কুলগুলো। অপরপক্ষে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো শিক্ষা খরচের সুবিধা সহনীয় রাখতে সন্তানদের সরকারি স্কুলে ভর্তি করাতে পারেন না বেহাল অবস্থার কারণে। সরকারি স্কুলগুলোতে অবকাঠামো ও অন্যান্য সব সুবিধা থাকার পরও এর রুগ্ণ দশার কারণ খুঁজে বের করা দরকার। ভেবে দেখা দরকার বেসরকারি স্কুলের তুলনায় সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা বেতন, প্রশিক্ষণ, পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা অনেক বেশি পাওয়ার পরও কেন সরকারি স্কুলগুলোর প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ছে না। অভিযোগ আছে, ঢাকার কয়েকটি নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত ডোনেশন দিতে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, ডোনেশন দিয়ে অভিভাবকরা সন্তানকে যে স্কুলে পড়াতে পাঠাচ্ছেন, সেখানকার পড়াশোনাও অনেকটা কোচিং ও প্রাইভেট টিউটরনির্ভর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরেও যদি টাকা খরচ করে পড়তে হয়, তাহলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজটা আসলে কী? সাম্প্রতিক ভিকারুন নিসা নূনের ছাত্রী আত্মহননের ঘটনা আমাদের একটি নতুন বার্তা দিয়েছে। টাকা খরচ করে অভিভাবকরা যে শিক্ষালয়ে সন্তানকে পড়তে পাঠাচ্ছেন, সেই শিক্ষালয় একজন অভিভাবককে সম্মান দিতে জানে না। শিক্ষক হিসেবে যাদের নিজেদের শিক্ষায় গলদ রয়েছে, তারা আবার কী শিক্ষা দেবে, সে বিষয়টিও ভাবা দরকার।

দেখা যায়, রাজধানীসহ দেশের জেলা উপজেলা পর্যায়ে ব্যাঙের ছাতার মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠান দেখলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা অনুসরণ করা হয় বলে মনে হয় না। একটি এলাকায় অলিতে গলিতে বিভিন্ন নামের পসরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে একধরনের অনিয়ন্ত্রিত ও অনৈতিক ব্যবসা চলছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রথমত এলাকার জনসংখ্যার আনুপাতিক হার এবং বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করা দরকার। দ্বিতীয়ত প্রতিষ্ঠান প্রধানের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি আছে কি-না দেখা দরকার। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য শিক্ষক নিয়োগের ন্যূনতম যোগ্যতা এবং বেতন কাঠামো থাকা দরকার।  সেই সঙ্গে অভিভাবকদের শিক্ষাব্যয়ের চাপ কমানো এবং শিক্ষার্থীদের শৈশব ও কৈশোরের বিকাশে অধিক পরীক্ষার চাপমুক্ত করার বিষয় বিবেচনা করে নিয়ম বাস্তবায়ন করা দরকার।

দেখা গেছে, বছরের শুরুতে ভর্তির সময় সেশন ফি, ভর্তি ফি, বই, খাতা, নোটবুক, ডায়রি, পোশাক, অনলাইন সার্ভিসসহ নানান ছুঁতোয় মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে নেয় প্রতিষ্ঠানগুলো। মূলত এই ভর্তিকালীন বাণিজ্য দিয়ে ফুলেফেঁপে ওঠে শিক্ষাবণিকেরা। তারপর সারা বছর মাসিক বেতন, কয়েক দফায় বিভিন্ন টার্ম পরীক্ষার ফিস, পিকনিক, ক্লাসপার্টি,  সিলেবাস, মডেল টেস্টের শিটসহ নানান বাহানায় টাকায় আদায় করে। টাকা দিতে দিতে অভিভাবকরা হাঁপিয়ে ওঠেন। তাই এসব বিষয় বিবেচনা করে নতুন শিক্ষামন্ত্রী যত শিগগির সম্ভব ভুঁইফোঁড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে চলমান শিক্ষাবাণিজ্য বন্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন- এটাই জনগণের প্রত্যাশা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads