‘ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা’ দৈনিক বাংলাদেশের খবরের এমন একটি প্রতিবেদন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সূত্র মতে, ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত ৩০টি ক্যাম্পে। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই অসহায় শরণার্থী মানুষগুলো শুধু একটু ছাদহীন আশ্রয় পেয়েছে। যেখানে তাদের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসার মতো অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটাতে যুদ্ধ করতে হবে এই পরবাসেও। আর তার জন্য প্রয়োজন একটি কর্মসংস্থানের। সেই লক্ষ্য পূরণে স্থানীয় দালালদের প্ররোচনায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়বে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা, এটাই স্বাভাবিক। খবরে প্রকাশ, গত ১৬ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫৮ হাজার ৩৬১ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে পাঠিয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে এসব কাজে সহযোগিতা করায় ৫৩৬ দালালকে আটক করা হয়েছে।
কিন্তু শুরু থেকেই এ ব্যাপারে সতর্ক ও সজাগ না থাকলে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। বিভিন্ন সময়ে সংঘাতের কারণে যারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তারা যদি চিহ্নিত ও তালিকাবদ্ধ থাকে, তাহলে তা সামগ্রিক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সঙ্কট নিরসনে সহায়ক হবে। কেননা অতীতে দেখা গেছে, অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে যেতে সক্ষম হয়। আবার মাদক ব্যবসার মতো বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কার্যক্রমেও জড়িয়ে পড়েছে। ফলে সমাজে খুন, রাহাজানি, সন্ত্রাস বৃদ্ধি পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এই পরিস্থিতিতে গত বছর সরকারের রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন করে নির্দিষ্ট ক্যাম্প বা স্থানে রাখার পরিকল্পনা একটি শুভ উদ্যোগ ছিল নিঃসন্দেহে।
এক্ষেত্রে জনপ্রশাসনকে সর্বোচ্চ কড়াকড়ি সতর্কতা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশের তরফে অনেক আগেই নির্দিষ্ট ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের বাড়ি ভাড়া বা আশ্রয় না দেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে। তা দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদেরকে পালন করতে হবে। পরিসংখ্যান বলছে, স্থানীয় লোকজনের চেয়ে রোহিঙ্গাদের জন্মহার প্রায় দ্বিগুণ। অধিক জনসংখ্যার কারণে আইনশৃঙ্খলাসহ পরিবেশ ও পর্যটনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। সুতরাং, সরকারের কৌশলপত্রের সুপারিশ অনুযায়ী তাদের জন্মহার রোধে এখনই যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি তারা যাতে ভোটার তালিকাসহ নাগরিকত্বের নিবন্ধন না নিতে পারে, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্ববাসীর আস্থা অর্জন করেছে। কিন্তু সীমিত সম্পদের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাগ্রে বিবেচনায় নিতে হবে। আমরা আশা করি, জোর কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বিশ্বনেতারা দ্রুততম সময়ে মিয়ানমারকে বাধ্য করবেন রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে এবং ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনের মাধ্যমে তাদের বৈধ নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে। একমাত্র রোহিঙ্গাদের বৈধ নাগরিকত্ব প্রদানই রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও টেকসই সমাধান বয়ে আনতে পারে।