• মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪২৮

সম্পাদকীয়

ঘন কুয়াশায় বন্ধ ফেরি

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার দিকে নজর দিন

  • প্রকাশিত ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয়ের অন্তর্গত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। কিন্তু প্রতি বছরই শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের যাত্রীদের যাতায়াতে পড়তে হয় দুর্বিষহ ভোগান্তিতে। শীতকালে প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে বিঘ্নিত হয় পরিবহন ও যাত্রী পারাপার। শুধু শীত মৌসুমেই নয়, বলা যায় দুই ঈদসহ বর্তমানে বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে ছুটিতে নাড়ির টানে গমনরত যাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত অতিরিক্ত পরিবহন পারাপারে এ নৌরুটে দেখা দেয় দীর্ঘ লাইন। অথচ প্রতি বছরের এই চিত্র নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ আজ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের নজরে আসেনি।

উপরন্তু বর্ষা মৌসুমেও দেখা দেয় নজিরবিহীন দুর্ভোগ। অতিরিক্ত স্রোত, পন্টুন ভেসে যাওয়া, বিভিন্ন কারণে বিকল হওয়ায় ফেরির সংখ্যা কমে যাওয়া ইত্যাদি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার উভয় পাড়ে অপেক্ষারত পরিবহনের যাত্রীদের অমানবিক ভোগান্তিতে ফেলে। অথচ প্রতি বছর এ নৌরুটের এমন চিত্র সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ সাধারণ মানুষের আজ অজানা নয়। কিন্তু ফেরি চলাচলে স্বাভাবিক ছন্দ আজো ফিরে আসেনি। ফলে ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীসাধারণকে। অসহনীয় কষ্টভোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন মহিলা ও শিশু যাত্রীরা। দুঃখজনক যে, আজো এ অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটেনি।

এরকম পরিস্থিতিতে অন্তত শীত মৌসুমে যাত্রীসহ পরিবহন পারাপার সহজ করে তুলতে ২০১৫ সালে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ফেরি খানজাহান আলী, শাহ আলী, কেরামত আলী, ভাষাশহীদ বরকত ও কে-টাইপ ফেরি কপোতী, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর, শাহ আমানত ও শাহ পরান ফেরিতে ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট সংযোজন করা হলেও ওই বছরের শীত মৌসুমে তা সুফল বয়ে আনতে পারেনি। এমনকি এরপর তিন বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও লাইটগুলো মেরামত বা এর আধুনিকায়নে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকার কোটি টাকা খরচ করে ফগ লাইট লাগালেও ব্যবস্থাপনার কিছু ত্রুটির কারণে এগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না।

বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষের মতে, ঘন কুয়াশা প্রাকৃতিক বিষয়। তখন ফগ লাইটও কাজ করে না। তবে কুয়াশা কেটে গেলে চলাচলকারী ১৬টি ফেরির মাধ্যমে দ্রুত তারা যানবাহন পার করে থাকেন। তাছাড়া ফগ লাইটের বিষয়টি প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। কিন্তু রাজবাড়ীতে বিআইডব্লিউটিসি প্রকৌশল বিভাগ কার্যালয় না থাকায় তাদের সঙ্গে কথা বলা এখানকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সম্ভব হয় না। এটি একটি খোঁড়া যুক্তি। আমাদের মনে রাখতে হবে, কর্তব্যপরায়ণতা সব সমস্যার পথ খুলে দেয়।

রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথের দীনহীন চেহারা দীর্ঘদিন বজায় থাকা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কখনো প্রবল জোয়ার, কখনো কুয়াশা, আবার কখনো ফেরি বিকল- এসব অজুহাতে সাধারণ মানুষের চলাচল বিঘিত্ন হবে, দুর্ভোগ স্থায়ী রূপ নেবে তা কোনো কাজের কথা নয়। এই অবস্থা পাল্টানো দরকার। আমরা জানি, এসব দেখভালের দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিসির ওপর ন্যস্ত। হ্যাঁ, কথাটা সত্য! তবে সড়ক ও জনপথ বিভাগও এ দায়িত্বের বাইরে নয়। জনস্বার্থে জরুরি কাজের ক্ষেত্রে কোনোরকম উদাসীনতা বা অব্যবস্থাপনা কাম্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে আমরা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করছি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির প্রতি নজর দিতে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads