• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জরুরি

  • প্রকাশিত ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই তথ্যমন্ত্রী বলছেন, নবম ওয়েজ বোর্ড যত দ্রুত সম্ভব ঘোষণা করা হবে। টেলিভিশন সাংবাদিকরাও যাতে ওয়েজ বোর্ডের আওতায় আসে, তা নিয়েও তিনি কাজ করবেন। পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রেক্ষিতে সাংবাদিক সমাজের যে উদ্বেগ রয়েছে তা কমাতে কাজ করবেন। একই সঙ্গে ভুঁইফোঁড় অনলাইন, অনলাইন টিভি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো যাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, সে বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করবেন। এসব বিষয়ে নব দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি আশাবাদের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু দেখার বিষয় হলো, এসবের ইতিবাচক বাস্তবায়ন কতটা ঘটে।

বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের দেশে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার মর্যাদা, নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার ভীত অনেক দুর্বল। সাংবাদিক পেশার সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের ভূত-ভবিষ্যৎ যেন অনিশ্চয়তার আঁধারে হাবুডুবু খাচ্ছে। কারণ এ পেশাটির সামাজিক দায়িত্ব অন্যসব পেশার চেয়ে অনেক বেশি এবং ঝুঁকিপূর্ণ হলেও পেশাদারিত্বের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীন। দেশে প্রিন্ট, টেলিভিশন, অনলাইনসহ অনেক সংবাদমাধ্যম থাকলেও চাকরির বাজারে সাংবাদিকদের বেকারত্বের ঝুঁকিটি থেকেই যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হলো, সাংবাদিকদের জন্য সরকার ঘোষিত ওয়েজ বোর্ড অনুসারে বেতনকাঠামো সব গণমাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আর এর ফলে সাংবাদিকতার পেশাদারিত্ব ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে।

যারা রাতদিন খেটে দেশের সার্বিক খবর উপস্থাপনায় নিরলস কাজ করছেন, তারা মাস শেষে ঠিকমতো বেতন পান না। অথবা বেতন যা পাচ্ছেন তা দিয়ে তার দিন চলে না। এর ফলে এ পেশায় নিয়োজিতরা পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বস্তিতে দায়িত্ব পালনের মানসিক অবস্থায় থাকেন না। সাংবাদিকতার মতো পেশায় যাপিত জীবনে টানাপড়েন থাকবে- এটাই যেন নিয়তির লিখনে পরিণত হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে স্বাধীনতা অর্জনের ৪৭ বছর পেরিয়ে সাংবাদিকতা পেশায় শৈল্পিকতার আশা যেন হতাশার চাদরে ঢাকা আছে। অধিকাংশ গণমাধ্যম মালিক সাংবাদিকদের জন্য প্রণীত ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী কর্মীদের বেতন দিচ্ছেন না। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে না সংবাদকর্মীদের। তাদের জীবনে সঞ্চয়ের সুযোগ না থাকার কারণে তারা সন্তানদের ভালো স্কুলে পড়ানো, সুচিকিৎসা, মাথা গোঁজার ঠাঁই ও শেষ জীবনের অবলম্বন বলে কিছুই থাকছে না।

সাংবাদিকতা পেশার নিরাপত্তার স্বার্থে ওয়েজ বোর্ডের নিয়ম মেনে সাংবাদিকদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়া নিশ্চিতকরণে সার্বক্ষণিক তদারকির প্রয়োজন আছে। তথ্যমন্ত্রী তার এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের শুরু থেকেই ভূমিকা রাখবেন এটা প্রত্যাশিত। সেই সঙ্গে আরো যেসব বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে- ১. সাংবাদিকদের জন্য পেনশন সুবিধা নিশ্চিত করা, ২. ঝুঁকিভাতা বাড়ানো, ৩. সহজে ও সাশ্রয়ী চিকিৎসাপ্রাপ্তিতে সাংবাদিকদের জন্য হেলথ কার্ড দেওয়া, ৪. সাংবাদিকদের জন্য আবাসন নিশ্চিত করা, ৫. সাংবাদিকদের সন্তানদের জন্য শিক্ষাভাতার ব্যবস্থা করা, ৬. পেশাদারিত্বের প্রসারে জ্ঞান আহরণে ভ্রমণ সুবিধা দেওয়া, ৭. পারিবারিক উন্নয়নে সহজ কিস্তি ও দীর্ঘমেয়াদে লোন সুবিধা দেওয়া।

মনে রাখা দরকার, সাংবাদিকতা পেশাটি পুরোমাত্রায় বেসরকারি মালিকানানির্ভর। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশার প্রধানতম দায়িত্ব দেশের কল্যাণে নিবেদিত হয়। সে হিসাবে এই পেশাজীবীদের সার্বিক নিরাপত্তায় সরকারেরও কিছু দায়-দায়িত্ব আছে। আমরা আশা করব বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি উন্নয়নের বার্তা আহরণ ও বহনকারী সেবক হিসেবে সাংবাদিকদের আর্থ-সামাজিকভাবে একটি মর্যাদাশীল পেশায় উন্নীত করার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবই করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads