• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো বন্ধ

স্বাস্থ্য নিরাপত্তাই আগে

  • প্রকাশিত ২০ জানুয়ারি ২০১৯

১৯ জানুয়ারি শনিবার দেশব্যাপী ২ কোটি ২০ লাখ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কথা ছিল। সরকারের ব্যাপক প্রচারণা ও প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে ৬ মাস থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কর্মসূচি শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। ক্যাপসুলের মান নিয়ে শঙ্কা থাকায় ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো কর্মসূচি স্থগিত করেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়। এ প্রসঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল একটির গায়ে অপরটি লেগে যাচ্ছে এমন অভিযোগ আসায় পরীক্ষার জন্য সময় নেওয়া হচ্ছে। বলা হয়েছে কর্মসূচির পরবর্তী তারিখ পরে জানানো হবে। আপাত বড় কোনো দুর্ঘটনার আগে বিষয়টি নজরে আসাকে ইতিবাচক বললেও এটি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে।

প্রথমত শেষমুহূর্তে হলেও ক্যাপসুলের মান খারাপ অথবা প্যাকেজিংয়ের মান নিয়ে অভিযোগ আসার কারণে বড় বিপদ কেটে গেছে বলতে হবে। কেননা এর সঙ্গে কোটি শিশুর জীবন ও ভবিষ্যৎ সম্পৃক্ত। কিন্তু অস্বাভাবিক ব্যাপারটি হলো, দেশের ভবিষ্যৎ এই শিশুদের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি জনগুরুত্বপূর্ণ তথা জনস্বাস্থ্য বিষয়ক এমন একটি বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা মোটেও কাম্য হতে পারে না। উদাসীনতার প্রশ্নটি এসে যায় এই কারণে যে, ওষুধের মতো স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করার আগেই কেন এর মান নিশ্চিত হওয়ার দরকার মনে করেননি সংশ্লিষ্টরা। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো এই ক্যাপসুল খাওয়ানো হতো খুব অল্প বয়সী শিশুদের। এমন একটি ভুলের কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। ভাবতেও গা শিউরে ওঠে এই কর্মসূচি শুরু হয়ে গেলে অথবা সম্পন্ন হওয়ার পর এ বিষয়টি নজরে এলেও করার কী-ইবা ছিল।

মূলত রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ১৯৯৪ সাল থেকে দেশের শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে। দীর্ঘদিন এই ক্যাপসুল খাওয়ানোর ফলে রাতকানা রোগের প্রকোপ দেশে অনেক কমে গেছে। ভিটামিন ‘এ’ মানবদেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, বিশেষত শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া ভিটামিন ‘এ’র অভাবে রাতকানাসহ চোখের অন্যান্য রোগ এবং রক্তশূন্যতাও হতে পারে। এ কারণে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য নীতিমালা অনুযায়ী, ভিটামিন ‘এ’র অভাব পূরণে বছরে দুবার সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। এটি সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের রুটিন কাজের অংশ। পাশাপাশি কোটি শিশুর স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় এটি একটি ব্যাপক কর্মসূচিও বটে। এ ধরনের কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্তরা এ ধরনের ভুল করবেন- এটি অপ্রত্যাশিত।

আমরা জানি, রাতকানা রোগ প্রতিরোধেও এই ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। কারণ ভিটামিন ‘এ’র অভাব হলে রড কোষগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হয়। রডোপসিন অণুর একটি অংশের নাম রেটিনাল, যেটি তৈরি হয় ভিটামিন এ-র মাধ্যমে। ভিটামিন এ-র অভাব হলে রডোপসিন তৈরি ব্যাহত হয়, ফলে রড কোষ আলো শনাক্ত করতে পারে না। ফলে ভিটামিন এ-র অভাবে ‘রাতকানা’ রোগ হয়। প্রজন্মকে রাতকানা রোগ থেকে আগাম রক্ষার জন্য সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে দেশব্যাপী। অন্যান্য বছরে পরিচালিত এই কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। সফলতার এই ধারাবাহিকতা এবং প্রজন্মের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর। এই ঘটনায় তাদের অদক্ষতা আছে-একথা বলা যাবে না, বরং উদাসীনতার কারণেই এমনটি হয়েছে কি না, সেটা তদন্ত করে দেখা দরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরাত দিয়ে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ‘ক্যাপসুলের টেকশ্চারে সমস্যা থাকায় কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। কয়েক জায়গায় খুলে দেখা গেছে, ক্যাপসুলগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি লেগে আছে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওষুধের মানের কোনো সমস্যা ছিল না।’ যদি তা-ই হয়ে থাকে তবে তদন্ত করে দেখতে হবে এই অবস্থার পেছনে দায় কাদের এবং এর ক্ষতিপূরণ তারাই যেন দিতে বাধ্য থাকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads