• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

জনতা রুখে দিল দুর্নীতি

মূলোৎপাটনে গণজাগরণ প্রয়োজন

  • প্রকাশিত ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

‘দুর্নীতি রুখে দিল জনতা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন সোমবার বাংলাদেশের খবরসহ বিভিন্ন পত্রিকায় গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়। ঝিনাইদহে সড়ক নির্মাণে দুর্নীতি, রুখে দিল জনগণ। জনগণের এই সচেতনতা ও সাহসী পদক্ষেপ প্রমাণ করে জনগণ একতাবদ্ধ হলে অনিয়ম আর দুর্নীতি কোণঠাসা হতে বাধ্য।

সাড়ে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেওয়াকে একটি ছোট্ট নজির মনে হলেও গণজাগরণের ক্ষেত্রে এটি দুর্নীতিবাজদের জন্য সতর্কবার্তাও বটে। বলতে দ্বিধা নেই দুর্নীতির করালগ্রাসে সরকারের সব দফতর-অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযুক্ত। তাদের দুর্দমনীয় মনোভাবের কারণে ভালো ও সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও একপ্রকার কোণঠাসা হয়েই রয়েছেন। উন্নত বাংলাদেশের রূপকল্প রচয়িতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সব মন্ত্রী-এমপিকে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সর্বশক্তি নিয়োগের কথাও জোর দিয়ে বলেছেন। সেই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন, দুর্নীতি সমাজের সব ক্ষেত্রে ছেয়ে গেছে। আমরাও বলব দুর্নীতি নিয়ে দেশের যে দুরবস্থা তা একেবারে নির্মূল করা সম্ভব না হলেও, দুর্নীতি নির্মূলের অবিরাম অভিযান অবশ্যই সুফল বয়ে আনবে।

জনশ্রুতি আছে, দেশের সমৃদ্ধির বারো আনাই খেয়ে ফেলে দুর্নীতি। এটা নির্মম বাস্তবতা। তা-ই যদি না হতো, তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের যে কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হয়ে আসছে, তার আরো ভালো সুফল পাওয়ার পাশাপাশি উন্নয়ন কাজে ত্বরিতগতি সঞ্চারের সুযোগ ছিল। মনে রাখা দরকার, দুর্নীতি দমন সরকারের একার কাজ নয়। এটি একটি সামাজিক আন্দোলনেরও বিষয়। দুর্নীতি নির্মূলে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। দুর্নীতিবাজদের শাস্তি না হওয়া এবং নীতিবানদের পুরস্কৃত না করাটাও দুর্নীতি বিস্তারের একটি বিশেষ কারণ। এরই ফলে আমরা দেখতে পাই, নীতিভ্রষ্টতা রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে ছড়িয়ে গেছে সর্বসাধারণের মধ্যে। এভাবে ধ্বংস হয়েছে সব প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে চলছে নিয়মভাঙার মহোৎসব।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ শাখা ২০১২ সালে একটি গবেষণা করে দেখেছে, ছোটখাটো কাজের দুর্নীতির জন্য প্রতিবছর আমাদের দেশে ৬ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এই টাকা দিয়ে প্রায় ৮ হাজার হাসপাতাল অথবা ১২ হাজার প্রাইমারি স্কুল তৈরি করা যায়। এই হিসাবে সহজেই অনুমান করা যায়, দুর্নীতি যদি না থাকত, তবে আমাদের দেশটি আজ কোথায় থাকার কথা! বিষয়টি ওপেন সিক্রেটের মতো, প্রায়ই শোনা যায় সারা জীবন চাকরির সম্বল পেনশনের টাকা তুলতে অবসরপ্রাপ্তদের ভোগান্তির কথা। এটিও সম্ভব হচ্ছে ওই দুর্নীতির কারণে। একইভাবে নিয়োগে দুর্নীতি না হলে সহজে চাকরি পেত সাধারণ নাগরিকরা। নীতিবান মানুষের মর্যাদা সমাজে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হলে দুর্নীতির প্রবণতা কমে যেত।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের বন কর্মকর্তা ওসমান গনির বাসায় বালিশের ভেতর, চালের মটকায়, বিছানার তলে টাকার পাহাড় পাওয়া গিয়েছিল। ২০১৭ সালে হাতিরঝিলে কোটি টাকার গাড়ি ফেলে রেখে আলোচনার সৃষ্টি করে জনৈক দুর্নীতিবাজ। এতে একটি বিষয় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, কঠোর অভিযান সারা বছর চলমান রাখা হলে দুর্নীতিবাজরা সম্ভবত রাস্তাঘাটে দুর্নীতির টাকা ফেলে রেখে মুখ লুকাবে। জনসচেতনতায় ঝিনাইদহের ওই দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ হওয়ায় এবং কাজটি আটকে যাওয়ায় দেশের মানুষ এখন নতুন করে আশায় বসতি করতে শুরু করেছে। আশা করি, নতুন সরকার দেশের সর্বস্তর থেকে দুর্নীতি নির্মূলে সক্ষম হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads