• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
দুর্যোগ মোকাবেলায় চাই নীতিমালা

দুর্যোগ মোকাবেলায় চাই নীতিমালা

সংরক্ষিত ছবি

সম্পাদকীয়

চতুর্থ আরসিজি সম্মেলন

দুর্যোগ মোকাবেলায় চাই নীতিমালা

  • প্রকাশিত ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

ঢাকায় আজ শেষ হচ্ছে তিন দিনব্যাপী চতুর্থ আরসিজি (রিজিওনাল কনসালটেটিভ গ্রুপ) সম্মেলন। মূলত দুর্যোগ মোকাবেলায় আন্তঃদেশীয় সমন্বয় জোরদার করতে আগামী ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা ও সমন্বয়কারী সংস্থা ইউএনওসিএইচের উদ্যোগে ২০১৪ সালে রিজিওনাল কনসালটেটিভ গ্রুপ (আরসিজি) গঠন করা হয়। সংগঠনটির উদ্দেশ্য ছিল সিভিল মনিটরিং সমন্বয়ের মাধ্যমে বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলা কার্যক্রম বেগবান করা। এবারের সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় শিখন ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক সহায়তা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। আলোচনা করা হবে ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল নির্ধারণ বিষয়েও।

আমরা জানি, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার একটি। জার্মানির রুহর বিশ্ববিদ্যালয় বোখাম এবং ডেভেলপমেন্ট হেল্প অ্যালায়েন্স নামে একটি বেসরকারি মানবিক সংস্থার যৌথভাবে পরিচালিত নতুন একটি জরিপে দাবি করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের ১৫টি দেশ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ নবম স্থানে রয়েছে। আমরা এও জানি, এ দুর্যোগ সাধারণত দুধরনের- মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ব্যক্তিস্বার্থে পাহাড় কাটা, নদী-খাল দখল ও ভরাট, নদীর তীরের মাটি খনন, বন উজাড় প্রভৃতি কারণে প্রতিবছর পাহাড় ধস, নদীভাঙন, বন্যা, খরাসহ নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বহু মানুষের জীবন ও ফসলহানি ঘটছে। অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ পিছু ছাড়ছে না। ফলে অকাল বন্যা অথবা অনাবৃষ্টির পাশাপাশি ভয়ানকভাবে বেড়ে গেছে বজ্রপাত। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ শীত মৌসুমে হঠাৎ শৈত্য ও উষ্ণপ্রবাহ এবং ঘন কুয়াশার আচ্ছন্নতা দেখা দেয়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ভূমিকম্পও অন্যতম। বাংলাদেশের জীবন ও অর্থনীতির ওপর এসব দুর্যোগের প্রভাব ব্যাপকতর হয়ে ওঠে কখনো কখনো। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর মানুষের হাত নেই, তবে প্রায় বছরই দুর্যোগে আমাদের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ যথেষ্ট পারদর্শিতা অর্জন করেছে। সাইক্লোন বা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমরা  মোকাবেলা করতে পারি।’ নদীভাঙন রোধ এবং বন্যা প্রতিরোধে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। উপকূলবর্তী অঞ্চলের মানুষদের ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস আগেই রেডিও-টিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার চালানোর ফলে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং দুর্যোগ-পরবর্তীকালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতাও করা হয়। একথা সত্যি যে, গত এক দশকে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ যথেষ্ট পারদর্শিতা অর্জন করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবেলার সক্ষমতা এখন বিশ্বস্বীকৃত। তবে ভুলে গেলে চলবে না যে, দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি দুর্যোগ প্রবণতা থেকে আমরা সরে আসতে পারছি কি-না, সেটাও ভাবার বিষয়। আবার দুর্যোগ-পরবর্তী ব্যবস্থাপনায় আমাদের সমন্বয়হীনতার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা দরকার। এসবের পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবিলায় ভবিষ্যৎ কর্মকৌশল নিয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি রাখতে হবে। কারণ

প্রাকৃতিক দুর্যোগ আগে জানান দিয়ে আসবে না। সুতরাং ভবিষ্যৎ

দুর্যোগ মোকাবেলায় চতুর্থ আরসিজি সম্মেলন সফল হোক- এই প্রত্যাশা রইল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads