• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

হতভাগ্য বাংলার শ্রমিক

সড়কে দুর্ঘটনার মড়ক কাটুক

  • প্রকাশিত ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

ঘুমন্ত কয়েকটি দিনভুখা শ্রমজীবীর জীবন গেল একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায়। বলতে দ্বিধা নেই, সড়কে যেন দুর্ঘটনার মড়ক লেগেছে। প্রতিদিনই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে জীবনাবসান ঘটছে কত শত মানুষের। এভাবে সড়কে মৃত্যুর মিছিল আর কত দীর্ঘ হবে? এর কি কোনোই সমাধান নেই? সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে এত বিস্তর লেখালেখি, জনরোষ আর টিভি-মিডিয়ায় এত খবর প্রচারের ফলাফলটা আসলে কী? আমরা কতটা রোধ করতে পারছি সড়কে অকাতরে মৃত্যুর তালিকা। এর দায় আসলে কার- রাষ্ট্র, পরিবহন মালিক-চালক, নাকি সামগ্রিক অসচেতনতার? এর সমাধানে জ্ঞান-গবেষণার কতটাইবা আমরা কাজে লাগাতে পারছি? এসবই ক্রমশ জনরোষের দাবানলে পরিণত হওয়ার অপেক্ষায়!

একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে জীবনচলার পথে কূলকিনারা খুঁজে পায় না তার পরিবার। যারা আহত হন বা আহত হয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন, তারা তো বেঁচে থেকেও মৃত। সুচিকিৎসা ও কর্মের উপযোগী সক্ষমতায় ফিরে না এলে তারা বেঁচে থেকেও পরিবারের ওপর বাড়তি বোঝা হিসেবে আরোপিত হয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটান। এছাড়া সড়কে দুর্ঘটনার কারণে দেশের আর্থিক যে ক্ষতি হয়, গাণিতিক হিসাবে সে অঙ্কটিও বিশালাকারে রূপ নেয়। এ সবকিছুর ঊর্ধ্বে যে হিসাবটি দাঁড়ায় তা হলো- মানুষের জীবনের মূল্য কি কখনো অর্থের মানদণ্ডে নির্ধারণ করা যায়! ঠিক যেমন হূদয়বিদারকভাবে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ইটভাঁটায় গভীর ঘুমে থাকা অবস্থায় ঘাতক ট্রাকের চাপায় চিরঘুমে চলে গেল কতগুলো তাজা প্রাণ। তারা ছিলেন কঠোর শ্রমজীবী মানুষ। ইটভাঁটায় যাদের হাড়ভাঙা খাটুনির ফলে নির্মিত হতো লাল টকটকে কঠিন ইট। আফসোস- এসব ইট দিয়েই নির্মিত হতো আলিশান দালানকোঠা, সড়ক আর ব্রিজ।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে ৫৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে ৭২২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সংঘটিত এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১৫ হাজার ৪৬৬ জন। যদিও সমিতির বার্ষিক পরিসংখ্যান বলছে ২০১৮ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়লেও হতাহতের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে আহত বা নিহতের সংখ্যা বিবেচনার চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানোর দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। কেননা, দুর্ঘটনা কমলে হতাহতের সংখ্যাও কমবে। এর পাশাপশি সড়ক দুর্ঘটনায় জীবনহানিকে অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে বিবেচনা করে তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ পারিবারিক সদস্যদের কর্মসংস্থানে সহায়তার দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে। তাছাড়া যারা আহত হবেন তাদের সুচিকিৎসা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তবে তার চেয়েও জরুরি বিষয়গুলো হচ্ছে- পরিবহন চালকের বয়স নির্ধারণ, প্রশিক্ষণ সাপেক্ষে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, পরিবহন মালিক-চালক এবং যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। এলাকাভিত্তিক সড়কে গাড়ির গতিসীমা নির্ধারণ করা, চালক লাগাতার কত ঘণ্টা এবং সপ্তাহে সর্বোচ্চ কতদিন গাড়ি চালাতে পারবেন তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া। গাড়ি চালানো অবস্থায় চালকের মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ এবং নেশা না করার বাধ্যবাধকতা জরুরি। একই সঙ্গে সড়কে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বন্ধ করা, ট্রাফিক আইন মেনে চলা, মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশ স্টেশন বাড়ানো- সর্বোপরি চালকের দোষে দুর্ঘটনার সর্বোচ্চ শাস্তি দ্রুত কার্যকরের মাধ্যমে সড়কে দুর্ঘটনার  মড়ক হয়তো কিছুটা হলেও কমবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads