• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

খাদ্যে ভেজাল, মরছে মানুষ!

নিরাপদ খাদ্য দাবি নয়, অধিকার

  • প্রকাশিত ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

আহা, কী ভয়ঙ্কর! এ কেমন সমাজে বাস করছি আমরা, যেখানে মানবতা ও মনুষ্যত্ববোধ চরমভাবে লাঞ্ছিত। বিবেক যেখানে অর্থের কাছে সমর্পিত। আমাদের প্রিয় সন্তান, পিতামাতাসহ আপনজনদের সুস্বাস্থ্য আর সুস্থ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনায় প্রতিদিন যেন বিষের পেয়ালা তুলে দিচ্ছি তাদের মুখে, যা ভক্ষণ করে আমরা তিলে তিলে খুন হচ্ছি; খুন হচ্ছে জীবনীশক্তি। আমাদের নৈতিক স্খলন কি এতই নিচে নেমে গেছে! বিবেক বলে কি আমাদের কিছুই নেই! তাহলে আমরা নিজেদের মানুষ দাবি করব কোন অধিকারে? লাভটাই কি আমাদের কাছে সবচেয়ে বড়!

খাবারে বিষ বা ভেজালের ক্ষতি সমাজের জন্য মাদকের চেয়েও ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। কারণ মাদক যার প্রয়োজন সে সেবন করে। তবে মাদকাসক্তির কুপ্রভাব সমাজকে নানাভাবে অসহিষ্ণু করে তোলে। আর মাদকের বিষ ছড়িয়ে পড়ে সমাজে। কিন্তু খাদ্যে ভেজাল তার চেয়েও ভয়ঙ্কর। কারণ, বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খেতেই হবে। বাজারে কত প্রকারের খাবার ও খাদ্যসামগ্রীতে ভেজাল হয় সে সম্পর্কে কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। দেশে ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যসামগ্রীর অবাধ ব্যবহারে বছরে দ্বিগুণহারে বিভিন্ন মরণব্যাধি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দেশে মরণব্যাধি মহামারী আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। কিডনি, লিভার, শিশু, গাইনি ও ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, ভেজাল খাদ্যসামগ্রীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটের পরীক্ষকদের মতে, বিষাক্ত নকল ট্যাং ও চকোলেট খেলে শিশু বা বয়স্ক যেকোনো মানুষের দ্রুত কিডনি নষ্ট, ক্যানসার, লিভার ব্যাধি, দীর্ঘমেয়াদি পেটের পীড়া, ডায়রিয়া, শিশুদের হার্টের রোগ এবং দৃষ্টিশক্তিও হ্রাস পেতে পারে। জানা গেছে চায়নিজ রেস্টুরেন্টগুলোতে খাবারকে সুস্বাদু করতে মাত্রাতিরিক্ত টেস্টিং সল্ট ব্যবহার মানুষের শরীরের জন্য বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের ভয়ঙ্কর ক্ষতির কারণ। এ ধরনের খাদ্য গ্রহণে গর্ভজাত শিশু বিকলাঙ্গ এমনকি গর্ভপাতও হতে পারে।

ভেজালবিরোধী অভিযান সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও নকল ওষুধ তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে সাধারণ খাদ্যদ্রব্য চাল, ডাল, আটা, মুড়ি থেকে শুরু করে শিশুখাদ্য গুঁড়োদুধ, পাস্তুরিত তরল দুধ, দই, আইসক্রিম, চকলেট, জুস, জেলি, কোল্ডড্রিংকস, মিষ্টি, ঘি, হোটেলের খাবার, ফলমূল, শাকসবজি, মাছ-মাংস, মুরগি, ওষুধ, জর্দা, ওরাল স্যালাইন, ভোজ্যতেল, বেকারির খাদ্যসামগ্রী ও

বিদেশি কসমেটিকসহ শতাধিক রকমের পণ্যসামগ্রীতে ভেজাল খুঁজে পাওয়া গেছে।

এসব শুনে আঁতকে উঠতে হয়! আমরা কী খেয়ে আসছি এতদিন? কীভাবে বেঁচে আছি? কেন অধিক লাভের লোভে প্রজন্মের মুখে তুলে দিচ্ছি বিষের পেয়ালা? এভাবে যারা নির্বিচারে খাবারে বিষ মেশায় তারা খুনি। প্রজন্মের শত্রু! তাদেরকে শুধু জেল-জরিমানা নয়; সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান দিয়ে দ্রুত আইন চালু করা জনগণের প্রাণের দাবি। তাদের শাস্তি হোক দৃষ্টান্তমূলক, যাতে আর কেউ খাবারে ভেজাল করে বা বিষ মিশিয়ে প্রজন্মকে মেধাশূন্য আর অসুস্থ করে তুলতে না পারে। কেননা নিরাপদ খাদ্য দাবি নয়, অধিকার।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads