• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
আবার জাগুক বুড়িগঙ্গা

আবার জাগুক বুড়িগঙ্গা

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

চিরুনি অভিযান সফল হোক

আবার জাগুক বুড়িগঙ্গা

  • প্রকাশিত ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

প্রভাবশালী দখলদারদের কবল থেকে বুড়িগঙ্গার প্রাণ ফেরাতে নদীর দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের সফলতা কামনা করি। নদীটি দখলমুক্ত করে দুই পাড়ে নির্মাণ করা হবে ওয়াকওয়ে ও বাগান। বহু প্রতীক্ষার পর সরকারের এই পদক্ষেপ জনমনে বিশেষত ঢাকাবাসীর মাঝে নতুন আশার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে। দখল আর দূষণের মাধ্যমে নদীর ওপর মানুষের এত অত্যাচার বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর আর কোথাও নেই। অথচ এই বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হিসেবে বিশ্বে সুপরিচিত। এককালে বাংলাদেশের হাটবাজার, মেলা, খেলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছিল নদী যোগাযোগকে কেন্দ্র করেই। সেই নদীকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিফলন হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত নানান পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছি।

নদী হলো প্রকৃতির প্রাণশক্তি। ফসল, যোগাযোগ ব্যবস্থা, মৎস্য সম্পদসহ প্রাণিজ সম্পদের আভাস ও খাদ্যের উৎস নদী। তার চেয়েও বড় বিষয় হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বা শোভাবর্ধনে নদী অতুলনীয় প্রাকৃতিক ক্ষেত্র। আমরা যদি বুড়িগঙ্গা নদীর কথা বলি, তাহলে দেখা যাবে একসময় প্রাণপ্রাচুর্যে টইটম্বুর ছিল ঢাকাকে আবৃত করে থাকা এই নদীটি। বুড়িগঙ্গার ইতিহাস গৌরবান্বিত ঢাকার ইতিহাস। এই বুড়িগঙ্গা নিয়ে ঢাকাবাসীর স্বপ্নের শেষ নেই। সবাই চায় এই নদীটি আবারো স্বরূপে ফিরে আসুক। বুড়িগঙ্গার প্রাণের স্পন্দনে ঢাকার ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়ুক দেশে- বিদেশে।

একসময় এই বুড়িগঙ্গা ধরেই দাঁড়িয়েছিল ঢাকা শহর। শহরের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য ও জীবন-জীবিকার অন্যতম অবলম্বন ছিল বুড়িগঙ্গাকে কেন্দ্র করেই। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় মানুষের অতিরিক্ত চাপ আর লোভের শিকারে পরিণত হয়ে ক্রমেই সংকুচিত হয়েছে বুড়িগঙ্গার পরিধি। এভাবে গত অর্ধশতকে নির্বিচারে মানুষের অত্যাচারে চলার ছন্দ হারিয়েছে নদীটি।

অনেক আশা জাগিয়ে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার রাজধানী ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে অবৈধ দখলদারদের থেকে উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়। নদী উদ্ধারে একাধিক অভিযানে বেশকিছু সাফল্যও  দেখা গেলেও কিছুদূর যেতে না যেতেই বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীর পানিপ্রবাহ বাড়লে আর দূষণ কমাতে পারলে আবারো প্রাণ ফিরে পাবে বুড়িগঙ্গা।  দূষণমুক্ত করা গেলে নদীতে ফিরে আসবে জলজ প্রাণীসহ সব প্রজাতির মাছ। জেলেরা ফিরে পাবে তাদের জীবিকা। রাজধানীবাসীর বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে এই নদীর অববাহিকা। এ জন্য দরকার একটি সমন্বিত উদ্যোগ।

সরকারের এবারের উদ্যোগে ও কৌশলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান যে করেই হোক সফল করতে হবে। এজন্য যত কঠোর অবস্থানে যাওয়া দরকার, তাই করতে হবে। সেই সঙ্গে ঢাকাবাসী জনগণকেও সরকারের পাশে থেকে সমর্থন জোগাতে হবে। তবে আমরা মনে করি, সরকার ইচ্ছা করলেই বুড়িগঙ্গাকে স্বরূপে ফিরিয়ে আনতে পারে। বুড়িগঙ্গার প্রাণের স্পন্দনকে স্থায়ী রূপ দিয়ে আবারো ঢাকার এই নদীটির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads