• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

বন্ধ হোক ঋণখেলাপের দৌরাত্ম্য

সামাজিক বয়কটই যথোচিত শাস্তি

  • প্রকাশিত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ঋণখেলাপি হওয়া এখন সংস্কৃতি হয়ে গেছে। এ যেন গায়ে-গতরে লজ্জাশরমের কোনো বিষয় নয়; বরং ঋণ খেলাপ করেও বহাল তবিয়তে থাকাটা যেন ক্ষমতার দম্ভোক্তি প্রকাশের মাধ্যম। এই সংস্কৃতি থেকে বের হতে হলে খেলাপিদের রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বয়কট করাই যথোচিত। তবে তাদের সবরকম রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। যদিও ঋণখেলাপিদের শাস্তি হিসেবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো তাদের পাসপোর্ট আটকানো, বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, সন্তানদের ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে না দেওয়া ও বাড়ি-গাড়ি কিনতে না দেওয়ারও প্রস্তাব করেছেন ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা। সত্যিই শাস্তি অপমানসূচক না হলে এই প্রবণতা বন্ধ করা সম্ভব হবে না।

ঋণখেলাপি মানে ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়া। দেশের অর্থনীতির বিকাশে এটি একটি নেতিবাচক প্রবণতা। খেলাপি ঋণ আদায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে যেসব ব্যাংক বা কর্মকর্তা যোগসাজশে লিপ্ত, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার না করার প্রতিফলন হিসেবে দেশে ঋণখেলাপি এবং খেলাপকৃত ঋণের পরিমাণ দুটোই বেড়েছে। ১০ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে চারগুণ। অভিযোগ আছে, এক ব্যাংকের পরিচালকরা অন্য ব্যাংকের পরিচালকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে একে অন্যের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা আর পরিশোধ করছেন না। এ বিষয়ে বিস্ময়কর তথ্যটি হলো, এসব পরিচালক ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তাদের ঋণখেলাপির তথ্য অন্য খেলাপি গ্রাহকদের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো-সিআইবিতে থাকে না। ফলে খেলাপি হয়েও নতুন করে ঋণ পেতে কোনো অসুবিধা হয় না ব্যাংক পরিচালকদের। দেশের অর্থনীতির বিকাশে ভয়ের ব্যাপারটি হলো, এই ঋণখেলাপের পরিমাণ অস্বাভাবিক আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি মানুষের মাঝে এমন একটি নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করলেও কোনো সমস্যা নেই। আর এই ধারণাটিই ক্রমান্বয়ে প্রবণতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ভাবতে অবাক লাগে, দেশের অর্থনীতি যখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সব সূচকে বাংলাদেশের ক্রমাগত অগ্রগতি যখন সারা বিশ্বে প্রশংসা কুড়াচ্ছে, তখন দেশের অভ্যন্তরে ব্যাংকঋণ খেলাপের নিন্দনীয় নজিরও সৃষ্টি হচ্ছে। এই দুটি পরস্পরবিরোধী ব্যাপার সমান্তরালে চলতে পারে না। জানা গেছে, ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। আর বছর ব্যবধানে বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। বলা হচ্ছে, অবলোপনকৃত ঋণ যোগ করলে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। দেশের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির জন্য এই অবস্থাটি খুবই ন্যক্কারজনক। এ অবস্থা আর চলতে দেওয়া যায় না। খেলাপকারীদের এখনই থামাতে হবে, নইলে এই প্রবণতা আস্তাকুঁড়ে হয়ে অর্থনীতি বিকাশের পথে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক কারণের মধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অসাধুতা অন্যতম দায়ী। খেলাপি ঋণ আদায়ে মনিটরিং, শাস্তি বাস্তবায়নে গরিমসিও একটি কারণ। তবে ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগ্রাসী ব্যাংকিংও একটি কারণ। তাদের মতে, দ্রুত শাখা খুলে এবং সহজে ঋণ দিয়ে নতুন ব্যাংকগুলো আগ্রাসী ব্যাংকিং চালাচ্ছে- যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এই অবস্থা থেকে উত্তরণ চাইলে ব্যাংকঋণ নিয়ে হোলিখেলার লাগাম টেনে ধরতে হবে। আর কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads