• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রয়োজন বিশ্ব ঐক্য

রোহিঙ্গা

সংরক্ষিত ছবি

সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রয়োজন বিশ্ব ঐক্য

  • প্রকাশিত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে লাখো ভয়ার্ত ও বিপন্ন  রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশের সীমান্তে। যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই ছিল শিশু। নারী ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যাও কম ছিল না। মিয়ানমার সেনাদের হিংস্রতা ও নৃশংসতার শিকার হয়ে তারা জীবন বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এই খবর সারাবিশ্ব মিডিয়ায় মানবিক বিষয় হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পায়। শুধু মুসলমান হিসেবেই নয়, মানুষ হিসেবে তাদের পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এই ঘটনায় বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে মানবতার নজির স্থাপন করে প্রশংসা অর্জন করে। বাংলাদেশের প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সাহসী ও মানবীয় পদক্ষেপের জন্য মানবতার মা খেতাবে ভূষিত হন। বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ আশ্রিত রোহিঙ্গাদের আপন করে নিয়ে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়ায়। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সহযোগিতার হাত বাড়ায়। বাংলাদেশ স্বল্প সময়ের মধ্যে ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বাসস্থান, খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে বিরল নজির সৃষ্টি করেছে।

মিয়ানমারের জন্মভিটা থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে নন্দিত হলেও একই স্থানে খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা সব মিলিয়ে দশ লক্ষাধিক মানুষের চাপ বাংলাদেশের ওপর বড় বোঝা হিসেবে আরোপিত হয়। জন্ম নেয় আরো অনেক শিশু। আশ্রিত রোহিঙ্গারা পাহাড়ের গাছ কেটে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করে। সব মিলিয়ে অর্থনীতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি দেখা দেয় নিরাপত্তার সঙ্কট। এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় গড়িয়ে ২০১৯ সালের যাত্রা শুরু হলেও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ ও আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে না।

যদিও এ নিয়ে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ধিক্কার উচ্চারিত হচ্ছে। যাকে এত দিন মানুষ জানত মানবতাবাদী নেত্রী হিসেবে! শান্তির দূত হিসেবে! কিন্তু বিশ্বের মানুষ তাকে ধিক্কার জানালেও তার ভূমিকা নীরব ও রহস্যময়! রোহিঙ্গারা মুসলিম হোক বা বৌদ্ধ না হোক, মানুষ তো তারা। মিয়ানমার তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করুক কিংবা না করুক- তারা তো শত শত বছর ধরে বংশানুক্রমে ওই ভূখণ্ডেরই অধিবাসী। সংখ্যাগুরু হোক কিংবা সংখ্যালঘুজন্মসূত্রে রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রের অন্য সবার মতো সমান নাগরিক অধিকার প্রাপ্য। এ কারণে রোহিঙ্গাদের তার দেশে ফিরিয়ে নিতেই হবে। তাদের নিরাপত্তা বিধান এবং নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতেই হবে। এ বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের ছাড় দেওয়ার কোনোই সুযোগ নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের প্রতি বাস্তবতা উপলব্ধির আহ্বান জানিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রনায়করা এই কাজে বাংলাদেশের প্রশংসার পাশাপাশি মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে অব্যাহতভাবে আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মিয়ানমার ও সে দেশের নেত্রী অং সান সু চি কোনো ইতিবাচক সারা না দিয়ে বিশ্ব নেতাদের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করছেন। এমন ঔদ্ধত্য মেনে নেওয়ার কোনোই যুক্তি নেই। মিয়ানমার যদি বিশ্ব মানবতার বাইরে তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে তাহলে বিশ্ব নেতাদেরও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রয়োজনে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যসহ আন্তর্জাতিক সকল সুবিধা বন্ধ করার পাশাপাশি মিয়ানমারের পণ্য বর্জন করাই যথোচিত হবে। আশার খবরটি হলো রোহিঙ্গাদের বিপন্নতার অবসান ঘটানোর প্রত্যাশা নিয়ে ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক সিটিতে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন (এফআরসি)। এফআরসির দুদিনের সম্মেলন থেকে মিয়ানমার বর্জনকর্মসূচি শুরু করা হবে। আমরা আশা করব এই কর্মসূচি সারা বিশ্ববাসীর সমর্থনে মিয়ানমারকে বাধ্য করার প্রাথমিক পদক্ষেপের সূচনা ঘটাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads