• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
শৈশব থেকেই গড়ে উঠুক নারীর মনোজগৎ

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

শৈশব থেকেই গড়ে উঠুক নারীর মনোজগৎ

  • প্রকাশিত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

শৈশব থেকেই কন্যাশিশুকে দেওয়া হয় ভদ্রতা, নম্রতা, মমতা- এসব নৈতিক শিক্ষা। বড় হওয়ার সঙ্গে ধৈর্য, দায়িত্ববোধ, সহনশীলতা, শালীনতা- এসব যোগ হয় চলার পথের পাথেয় হিসেবে। কারণ মেয়েটিকে মানিয়ে চলতে হবে পরিবার তথা সমাজের সঙ্গে। শৈশব থেকে বার্ধক্য— জীবনের দীর্ঘ সময়ে নারীকে কন্যা, জায়া, জননীসহ ভিন্ন ভিন্ন রূপে নিজেকে তুলে ধরতে হয়। আর সেটা করতে গিয়ে একজন নারী অনেক ক্ষেত্রেই নিজের আবেগ, অনুভূতি, ইচ্ছা-অনিচ্ছা লুকিয়ে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আবার যেসব নারী উচ্চশিক্ষিত ও কর্মজীবী, তারা কর্মজগৎ ও পারিবারিক দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যান, সেই সঙ্গে ভোগেন মানসিক চাপে। যে হাসিমুখে এসব করতে পারে— সে পরিবার ও সমাজের দৃষ্টিতে আদর্শ নারী, আর এখানেই তার জীবনের সার্থকতা। তাই শৈশব থেকেই নারীর মনের সঠিক বিকাশ জরুরি।

আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত ভদ্রসমাজে মেয়েরা যে পরিমাণ মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়, তা শারীরিক নির্যাতন থেকে কোনো অংশে কম নয়। কারণ মনের ক্ষতগুলো চোখে দেখা যায় না, কিন্তু জীবনকে ধীরে ধীরে নিস্তেজ করে ফেলে। রোগ এসে বাসা বাঁধে শরীরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে হাসিমাখা সুখী জীবনের ছবি দিয়ে ক্ষতগুলো আড়াল করার কত চেষ্টা আমাদের শিক্ষিত সমাজের মানুষের। বাস্তব চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। আমার এ লেখা পারিবারিক জীবনের সমালোচনা নয়, বরং অশান্ত মনোজগতের চিত্র তুলে ধরাই মুখ্য বিষয়। এই অস্থির সমাজে নিজেদের নিজস্বতা ও অস্তিত্ব ধরে রাখতে হলে শুধু শিক্ষিত আর গুণবতী হলেই চলবে না, নারীকে দৃঢ় মনের অধিকারীও হতে হবে। হতে হবে প্রবল ঝড়ে টিকে থাকা এক বটবৃক্ষ, যে ছায়া দেবে কিন্তু শিকড় হবে মজবুত।

মন অদৃশ্য, যা দৃশ্যমান তা অনুভূতির প্রকাশ মাত্র। মন শান্ত ও স্থির কিন্তু কষ্ট, দুশ্চিন্তা, হতাশা মনকে অশান্ত, অস্থির ও বিষণ্ন করে তোলে। মনো-গবেষকের মতে, দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা ব্যক্তির মনে রাখার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কারণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তি পারিপার্শ্বিক বিষয়ে অমনোযোগী থাকে। অস্থিরতা ব্যক্তিকে অনেক সময় আত্মকেন্দ্রিক করে দেয়, কখনো-বা সে কী চায় নিজেই বুঝতে পারে না। তখন অবচেতনভাবেই সে আর অন্যের আবেগ অনুভূতির সঙ্গে একাত্ম হতে পারে না। তাই মনকে শান্ত ও স্থির রাখা জরুরি। মানুষ সচরাচর শারীরিক সুস্থতা নিয়ে কথা বলে; কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যও ঠিক ততটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নারী-পুরুষ প্রায় প্রত্যেককেই জীবনে কোনো না কোনো সময় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ব্যক্তিগত বা কর্মজীবনের এসব সমস্যা মোকাবেলা করতে গিয়ে অবসাদ ও উদ্বিগ্নতা আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যারা দৃঢ় মনের, তারা এই উদ্বিগ্নতাকে কাটিয়ে সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারেন। মানসিক স্বাস্থ্যের এই ধারণার সঙ্গে মানসিক অস্বাভাবিকতার কোনো সম্পর্ক নেই। বিশ্বব্যাপী এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় প্রতি ৪ জনের ১ জন মানুষ বিষণ্নতা, উদ্বেগ, ব্যক্তিত্ব ও অনুভূতিজনিত সমস্যায় ভুগছে। দুর্ভাগ্যবশত এর মধ্যে ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ চিকিৎসা নিচ্ছেন তখনই, যখন তাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। বাকিরা এটাকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না। অথচ মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে অত্যন্ত ইতিবাচক দিক দিয়ে বিচার করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের মতে, স্বাস্থ্য হলো শরীর, মন ও সমাজের ভালো দিকগুলোর মেলবন্ধন।

তাই আসুন, শুধু সুস্থ শরীর নয়- সুস্থ মনও হোক সবার কাম্য। আর এজন্য শৈশব থেকেই সচেতনতা জরুরি। মনোবিশ্লেষকের তথ্যানুযায়ী, মনের অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ হতে দেওয়া উচিত। যেমন— হাসুন, কাঁদুন, প্রয়োজনে রাগ দেখান। যা করতে ভালো লাগে করুন। অতীত বা ভবিষ্যতে নয়, বর্তমানে মনোযোগ দিন। মেডিটেশন বা ইয়োগা করুন। হাঁটুন। নিজেকে এমন জায়গায় কল্পনা করুন যা আপনার মনকে শান্ত ও স্থির করতে সাহায্য করবে। সর্বোপরি সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে মনকে আরাম দিন। প্রশান্ত রাখুন।  নিজেকে ভালোবাসুন, ভালো থাকুন। তবেই তো অন্যকে ভালো রাখতে পারবেন। আর একজন মানুষের শরীর-মন ভালো রাখতে এসবের বিকল্প নেই।

 

রোকসানা জাহান ইপা

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads