• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

সাগর-রুনি হত্যার বিচার

দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার

  • প্রকাশিত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সাত বছর অতিবাহিত হলেও এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য আজো অধরাই থেকে গেল। কী কারণে হত্যাকারীদের এখনো চিহ্নিত করা যাচ্ছে না, এটি একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। আজ তার বিচার দাবির ৮ম বর্ষ শুরু হলো। এই ঘটনা মুক্ত সাংবাদিকতা বিকাশের ক্ষেত্রে বড় হুমকি। ভাবতে অবাক লাগে, যে সাংবাদিকরা প্রতিদিন হত্যা-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছেন, সেই সাংবাদিকরাই যদি সহকর্মীর বিচারের দাবিতে বছরের পর বছর আন্দোলন করেন তবে এ জাতির কপাল থেকে অবিচারের কলঙ্কমোচন আর সম্ভব হবে কি? গণতন্ত্রের বিকাশে যে সাংবাদিকরা অবিরত ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে এমন অবহেলা রাষ্ট্রের কাছে কাম্য হতে পারে না।

হত্যাকাণ্ডের পরপরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, আজ তা আট বছরে গড়ালো। বিচারহীনতার এই নজির উন্নত আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে কোনো ভালো উদাহরণ হতে পারে না। কেন এই বিলম্ব, এ নিয়ে পুলিশ, র‍্যাব এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশানুরূপ সদুত্তর পাওয়া যায় না। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে-  কোন এমন শক্তির প্রভাবে মামলা অগ্রসর হচ্ছে না। এই শক্তি কি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা শক্তির চেয়েও বড়! এ ঘটনায় এমন একটি পাবলিক পারসেপশন তৈরি হয়েছে যে, এর পেছনে এমন প্রভাবশালী কেউ জড়িত, যার কেশাগ্র স্পর্শ করার ক্ষমতা কারো নেই। যদি তাই হয়ে থাকে- আইনের শাসন নিশ্চিতকরণে এটি হবে রাষ্ট্রের একটি বড় দুর্বলতা।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সব হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে অপরাধীর বিচার কাম্য। তবে যারা জনগণের ন্যায়বিচারের পক্ষে মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তাদের বিচার নিয়ে এমন হেলাফেলা জনগণ মেনে নেবে না। তাই সাগর-রুনিসহ ইতোপূর্বে সংঘটিত সব সাংবাদিকের হত্যাকাণ্ডের বিচার অবিলম্বে কার্যকর হওয়া দরকার। তা না হলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হুমকিতে পড়বে। আর গণমাধ্যম ও এর চালিকাশক্তি সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব হবে না। এমনকি উন্নয়নের ধারাবাহিকতাও অনিশ্চিত হতে পারে।

আমরা মনে করি, সাংবাদিক হত্যা বন্ধ ও হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার।  নির্বাচনী ইশতেহারে মিডিয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকা দরকার। সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল করতে হবে। বর্তমান সরকার সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, ভেজাল ও দুর্নীতি প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করেছে। আমরা আশা করব সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে অপরাধী যিনি-ই হোন না কেন, তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নজির স্থাপন করা হোক।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads