• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

বইশিল্পের বিকাশ

প্রথম ক্রেতা হতে হবে সরকারকে

  • প্রকাশিত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

প্রকাশনাকে শুধু একটি নান্দনিক মেধা বিকাশকারী শিল্পই নয়, জাতি গঠনে এবং সৃজনশীল সংস্কৃতির সম্প্রীতি ঘটাতে এ শিল্পের ভূমিকা অগ্রগণ্য। এমন একটি শিল্পের প্রতি সরকার উদাসীন হবে না- এটাই জাতির প্রত্যাশা। সৃজনশীল প্রকাশনার প্রথম ক্রেতা হতে হবে সরকারকে। সরকার ক্রেতা হয়ে বইপঠনকে জনপ্রিয় করে তুললে প্রজন্মের মাঝে সৃষ্টিশীল নেতৃত্ব তৈরি হবে। সামাজিক অসঙ্গতি ও সংঘাত কমবে। এ কাজে সরকারেরই লাভ  বেশি। সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতার মেয়াদে ১০ কোটি করে ৫০ কোটি টাকার বই কিনলে পাল্টে যাবে প্রকাশনা শিল্পের অবয়ব। লেখক, পাঠক তৈরি হবে। এগিয়ে যাবে দেশ এবং জাতি। তবে সরকারের ক্রয়নীতিতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করতে হবে। তা না হলে প্রকাশনার মান ধরে রাখা সম্ভব হবে না। সরকার পৃষ্ঠপোষক হলে দ্রুততম সময়ে বিকশিত হবে এই সম্ভাবনাময় শিল্পটি। প্রতিষ্ঠিত হবেন লেখক এবং বাড়বে বইয়ের বাজার। আমরা একটি সৃজন ও মননশীল প্রজন্ম গড়তে পারব।

সেই সঙ্গে আমাদের সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সৃজনশীল বই কিনে পাঠাগার স্থাপন করা বাধ্যতামূলক হলে শত কোটি টাকার বই বিক্রি হওয়ার কথা। আশ্চর্য লাগে, এসব বিষয় নিয়ে প্রকাশনা সংস্থাগুলোর তৎপরতা লক্ষ করা যায় না। গৎবাঁধা বক্তৃতা না করে বইশিল্পের বিকাশে উদ্ভাবনীমূলক কার্যক্রম ও তৎপরতা বাড়াতে হবে। বইশিল্প বিকাশে সরকারের বড় ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা অতি আবশ্যক।

আমাদের সমাজে অদ্ভুত আরেকটি রীতি দুঃখজনকভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এমনকি শিল্প বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বনভোজনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে বই উপহারের বদলে গৃহসামগ্রী দেওয়া হয়। অথচ এসব আয়োজনে বইকে প্রাধান্য দিলে এই সিজনে কোটি কোটি টাকার বই বিক্রি হতে পারত। আরো একটি দুঃখজনক ব্যাপার হলো, আমাদের সমাজের একটি পরিবারের বইমেলা থেকে বই কেনার জন্য দুই হাজার টাকাও বাজেট থাকে না। দেখা গেছে, শিশুরা বই কিনতে চাইলেও মা-বাবার অনাগ্রহের কারণে তাদের বইয়ের চাহিদা মিটছে না। অথচ এই বাবা-মায়েরাই একদিন একবেলা পেটপুরে চায়নিজ খেয়ে ২-৩ হাজার টাকা অবলীলায় শেষ করেও যে আনন্দ প্রকাশ করেন, সন্তানকে সেই পরিমাণ টাকার বই কিনে দিয়েও গর্বিত হতে দেখা যায় না। দুঃখের বিষয় হলো, এমন বাবা-মায়েরাই আবার মননশীল সুসন্তান হিসেবে নিজের সন্তানকে দেখতে চান! এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে বিশেষ ভূমিকা নিতে  হবে।

আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার সর্বোত্তম জায়গা পরিবার।  সেখান থেকেই তৈরি হওয়ার কথা বইপড়ুয়া প্রজন্ম। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, সময়ের সঙ্গে আমরা যেন সাহিত্য, সংস্কৃতিচর্চা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আর এই সুযোগে অপসংস্কৃতির ভর আমাদের মননে ভাঙন শুরু করেছে। ফলে সমাজে ফুলে-ফেঁপে উঠছে অস্থিরতা। শূন্যতা, হাহাকার ধ্বংস করতে বসেছে আমাদের সৃজনী ক্ষমতা আর মানবিক মূল্যবোধকে। সমাজের এই অধঃপতন ঠেকাতে পারে কেবল সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ। বিশেষত শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগে সারা দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে জোরদার করলে অচিরেই দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে বলে আমাদের ধারণা। এজন্য সৃজনশীল বইশিল্পের বিকাশে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাখুবই জরুরি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads