• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হোক

দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হোক

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

ইসলামিক পর্যটন শহর ঢাকা

দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হোক

  • প্রকাশিত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

গত বছর ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর পর্যটনমন্ত্রীদের ঢাকা সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে এ বছর (২০১৯) ইসলামিক পর্যটন শহর ঘোষণা করা হয়। সামগ্রিকভাবেই বাংলাদেশে পর্যটন খাতের যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, তা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। ইসলামিক পর্যটনের জন্যে বাংলাদেশে রয়েছে অধিক সংখ্যক ঐতিহ্যবাহী ও আকর্ষণীয় স্পট। রাজধানী ঢাকার নিজেরই রয়েছে ইসলামিক ঐতিহ্যসন্ধানী দেশ-বিদেশের কৌতূহলী পর্যটক আকর্ষণের বহু উপাদান। এ শহরটি ঐতিহ্যগতভাবেই মসজিদের নগরী বলে পরিচিত। তাছাড়া সারা দেশে রয়েছে ইতিহাসসংলগ্ন বহু মসজিদ, যেগুলো ইসলামিক স্থাপত্যরীতির অনিন্দ্যসুন্দর নিদর্শন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় যে, বিশ্বের ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মুসলিম জনগোষ্ঠীর এক বৃহৎ অংশের মধ্যে ইসলামের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্থাপত্য নিদর্শন দেখার ও জানার কৌতূহল রয়েছে। বাংলাদেশ এদের আকর্ষণ করার জন্যে নিঃসন্দেহে একটি আদর্শ স্থান। ঢাকার প্রাচীন মসজিদ বিনিত বিবির মসজিদ, তারা মসজিদ, বিভিন্ন মোগল স্থাপত্যসহ বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ, খানজাহান আলীর দরগাহ, রাজশাহীর সোনামসজিদ, দিনাজপুরের চেহেল গাজীর মাজার, সিলেটের হজরত শাহ জালাল ও শাহ পরানের মাজার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি  হিন্দু ও বৌদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের বহু নিদর্শন রয়েছে আমাদের এই দেশে। মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, কান্তজির মন্দির, বান্দরবানের স্বর্ণমন্দির পর্যটক আকর্ষণ না করে পারে না। প্রকৃতপক্ষে পর্যটনের যতগুলো খাত আছে, তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ইকো ট্যুরিজমের জন্যে বাংলাদেশের মতো আদর্শ দেশ বিশ্বে খুব বেশি নেই। বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়, জঙ্গল, ঝরনা ও বন্যপ্রাণী ইকো ট্যুরিস্টদের আকর্ষণ করে সহজেই।

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনের ক্ষুদ্র একটি দেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত এই বাংলাদেশ অতীতকাল থেকেই পর্যটকদের কাছে একটি পরিচিত নাম। হিমালয়ের পাদদেশে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে নদীবেষ্টিত এই দেশের পর্যটন শিল্প অপার সম্ভাবনাময়। নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু এবং প্রাচীন সভ্যতার একটি কেন্দ্র হিসেবে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো অসংখ্য সম্পদ রয়েছে আমাদের। পর্যটন স্পটগুলোতে প্রচুর সংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগও রয়েছে। বর্তমানে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে এদেশের ত্রিশ লাখেরও অধিক মানুষ। বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান আরো বৃদ্ধি পাবে। আমাদের পর্যটন শিল্প নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এগিয়ে যাচ্ছে। বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট হিসেবে খ্যাত সুন্দরবন, দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, আর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দীর্ঘ একশ বিশ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ ইনানী সৈকত। বারো আউলিয়ার শহর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর মোহনার পশ্চিম তীরে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এবং নদীর মোহনার পূর্ব-দক্ষিণ তীরে পারকী সমুদ্রসৈকত। তিনশ ষাট আউলিয়ার শহর হিসেবে খ্যাত সিলেটে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্তহীন। প্রাচীন নগরী ময়মনসিংহ, ঢাকাসহ প্রতিটি বিভাগে ইসলামী ঐতিহ্যের স্থাপনাসহ অসংখ্য নিদর্শন বিদ্যমান, যা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য অফুরন্ত ভান্ডার ও মহামূল্যবান সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়।

এই সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোই সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ। অবকাঠামো এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে আমরা পর্যটন খাতকে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের একটি বড় খাতে রূপান্তরিত করতে পারি। ইসলামিক পর্যটন শহর হিসেবে ঢাকাকে এ বছর বিশ্বদরবারে উপস্থাপনের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অন্যান্য ইসলামী নিদর্শনের প্রচার ও প্রসারে যুগপৎ কাজ করা উচিত। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই পর্যটন শিল্প বয়ে আনে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। আমাদের পর্যটন শিল্পকেও সে লক্ষ্যে গড়ে তোলা সময়ের দাবি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads