• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালিত

যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে

  • প্রকাশিত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দ্বিতীয়বারের মতো গত ৫ ফেব্রুয়ারি দেশে অনেকটা নীরবেই পালিত হয়ে গেল দ্বিতীয় জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। ‘গ্রন্থাগারে বই পড়ি, আলোকিত মানুষ গড়ি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য ছিল জ্ঞানভিত্তিক আলোকিত সমাজ গড়া। সমাজ থেকে নিরক্ষরতা ও চিন্তার পশ্চাৎপদতা দূরীকরণ, শিক্ষা সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টিসহ একটি সহনশীল সামাজিক ও গণতান্ত্রিক চেতনাবোধের উন্মেষ ঘটানো। সর্বোপরি জনসাধারণের মাঝে মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালনের আয়োজন করা হয়। দেশে অনেক দিবস পালিত হলেও, এতদিন গ্রন্থাগার নিয়ে কোনো দিবস ছিল না। বলে রাখা ভালো, দিবস পালনের সংস্কৃতি আর গ্রন্থাগার সংস্কৃতি— দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান কিন্তু বিস্তর। তবুও ভালো, একটা কোনো দিবসের ছুতো ধরে মলিন হয়ে যাওয়া গ্রন্থাগার সংস্কৃতির মর্মমূলে যদি একটু হলেও স্পন্দন জাগানো যায়!

১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় স্থাপন করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির ভিত্তিপ্রস্তর। সেই দিনটিকেই করা হয়েছে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। দিনটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাণী দিয়েছেন। গ্রন্থাগার দিবস যখন পালিত হলো, তখন বাংলা একাডেমির আয়োজনে চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এক দিনের গ্রন্থাগার দিবস পালনের তাৎপর্য  প্রথমবারের তুলনায় এবারে জনমনে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে বলে বোধ হচ্ছে। যদিও ভালো করে বুঝতে না পারা গেলেও ভবিষ্যতে একুশের বইমেলায় দিবসটি শব্দিত হবে, এই আশা রাখি।

মানবজাতির শিক্ষা, রুচিবোধ ও সংস্কৃতির কালানুক্রমিক পরিবর্তনের সঙ্গে গ্রন্থাগারের নিবিড় সম্পৃক্ততা রয়েছে। সে কারণে গ্রন্থাগার হচ্ছে অতীত ও বর্তমান শিক্ষা সংস্কৃতির সেতুবন্ধন। এ সময়ে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদযাপন গ্রন্থাগার ব্যবহারে দেশের মানুষকে আরো উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

আমরা জানি, গ্রন্থাগার হলো জ্ঞানের ভান্ডার। জ্ঞানার্জন, গবেষণা, চেতনা ও মূল্যবোধের বিকাশ, সংস্কৃতিচর্চা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষকে আলোকিত করে তোলা এবং পাঠাভ্যাস নিশ্চিতকরণে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর পরই যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি একটি জ্ঞানমনস্ক জাতি ও সমাজ গঠনে কাজ শুরু করেছিলেন। বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য ও সাহিত্য সংস্কৃতির মূল্যবান উপাদান সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালেই তিনি আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রন্থাগারের সুষ্ঠু ব্যবহার, উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশ এবং বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে গ্রন্থাগার সংস্কৃতি যে অনুপেক্ষণীয় ভূমিকা পালন করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একটা সময় ছিল, গ্রাম ও শহরে ছোট-বড় অনেক পাবলিক লাইব্রেরি ছিল। সময় বদলে গেছে। প্রায় সর্বক্ষেত্রে আজ যখন ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে, তখন দেশে সহস্রাধিক সরকারি পাবলিক লাইব্রেরি পড়ে আছে ধুলামলিন অবস্থায়। তবে ধুঁকে ধুঁকে হলেও চলছে এনজিও পরিচালিত তিন সহস্রাধিক লাইব্রেরি। লাইব্রেরির প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে না গেলেও সময়ের সঙ্গে তাকেও বদলাতে হবে। লাইব্রেরিগুলোয়ও এখন থাকা চাই মাল্টিমিডিয়া সুবিধা। লাইব্রেরি সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে হলে রূপান্তরটা জরুরি। তা না হলে শুধু দিবস পালন করে কোনো লাভ নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads