• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
অবকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

দুই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ

অবকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি

  • প্রকাশিত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, সরকার নীতিগতভাবে ২ হাজার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। অর্থ ছাড় সাপেক্ষে প্রয়োজনে ধাপে ধাপে তা করা হবে। এটি আশার সঞ্চার করেছে দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষারত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে। সংসদের প্রশ্নোত্তরপর্বে শিক্ষামন্ত্রী আরো জানান, সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সাড়ে নয় হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্য থেকে প্রতিষ্ঠানের ধরন ও গুরুত্ব অনুসারে দুই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এমনকি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার জন্য ইতোমধ্যে এমপিও প্রত্যাশী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এখন চলছে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া। সরকারের এ উদ্যোগকে সময়ের বিবেচনায় আমরা সাধুবাদ জানাতেই পারি।

কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে শিক্ষকদের আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখা। একজন বেসরকারি শিক্ষকের বেতনকাঠামো যেমন হতদরিদ্র, তেমনি তিনি বঞ্চিত হয়ে থাকেন বৈশাখী ভাতার মতো সরকার কর্তৃক ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা থেকেও। ফলে ওই শিক্ষককে জীবিকা নির্বাহে প্রাইভেট পড়ানো কিংবা কোচিং ব্যবস্থার দ্বারস্থ হতে হয়। সুতরাং শ্রেণিকক্ষে যে ধরনের শিক্ষা প্রদান আমরা আশা করি তা থেকে শিক্ষার্থীরা হচ্ছে বঞ্চিত। বিভিন্ন গবেষণায় সে চিত্র প্রতিফলিতও হয়েছে।

দেখা গেছে, প্রতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার আশাতীত ভালো ফল লাভ করলেও এসব শিক্ষার্থী বিষয়ভিত্তিক দুর্বলতা নিয়েই পরবর্তী ধাপের যাত্রা শুরু করছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, প্রাথমিক শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। এর পেছনের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতি শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো বুঝতে পারে না। শিক্ষকরা পাঠদান করেন নম্বরের উদ্দেশ্যে, শেখানোর জন্য নয়। এছাড়া পাঠদানের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট শিক্ষাক্রম ও শিক্ষক সহায়িকা অনুসরণের কথা বলা হলেও অধিকাংশ শিক্ষকই তা অনুসরণ করেন না। সবার আগে এ পরিস্থিতির প্রতিকার করতে হবে। নতুবা এ দুর্বলতার কারণে পরবর্তী সময়ে অনেক শিক্ষার্থীই ঝরে পড়বে।

শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। দেশে মানসম্পন্ন ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এটি দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ বিষয়ভিত্তিক ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যবই সহজবোধ্য হয়ে উঠছে না। পাশাপাশি দক্ষ ও মেধাবীদের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক হিসেবে যুক্ত করা উচিত। একই সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে মানসম্পন্ন পাঠদান নিশ্চিত করা জরুরি। এজন্য নিয়মিত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পরিদর্শন নিশ্চিত করার ওপর জোর দিতে হবে। আবার শিক্ষকদের উচিত শিক্ষা নির্দেশিকা সঠিকভাবে অনুসরণ করা।

এমতাবস্থায় আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে যে, শুধু এমপিওভুক্ত নয়, শিক্ষা পদ্ধতির সামগ্রিক গুণগত মান বৃদ্ধিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উন্নতিকল্পে অবকাঠামোগত পরিবর্তনও জরুরি। তবে নিয়মবহির্ভূতভাবে কোচিং বাণিজ্য, প্রাইভেট ইত্যাদিতে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়াও আবশ্যক। একই সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের মানের বিষয়টির দিকেও নজর থাকা চাই। বিদ্যা অর্জনের প্রথম সোপান হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। অথচ সেখানে অংশগ্রহণ বাড়ছে ঠিকই; কিন্তু শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। দুই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার ক্ষেত্রে এ বিষয়টিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দেবেন আশা রাখি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads