• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

জঙ্গি ও মাদক সঙ্কট

প্রয়োজন তরুণদের নৈতিক শিক্ষা

  • প্রকাশিত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

কিছুদিন আগে আত্মসমর্পণ করল ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ী। জঙ্গি ও মাদক নির্মূলে সরকারের জিরো টলারেন্স এবং মাদক-সম্রাট খ্যাত বদির নেতিবাচক কার্যক্রম পরিহারের অঙ্গীকারে সমাজব্যবস্থায় আশার আলো দেখা গেলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে ৯ শতাধিক তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। সেই সঙ্গে পলাতক মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে রয়েছে ৩ শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র, যা উদ্ধারে শিগগির কাজ শুরু করতে যাচ্ছে র্যাব-পুলিশ। এসব অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা না গেলে যে কোনো সময় পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, মাদক সেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িতরাই দেশে কখনো যে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত ছিল না কিংবা ভবিষ্যতেও থাকবে না তা অস্বীকার করা যাবে না। 

খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, ডাকাতি তথা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হলে সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের কাছে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি চিহ্নিত পলাতক আসামি ধরাসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হোতাদের গ্রেফতারেও অভিযান অব্যাহত রাখা জরুরি। শুধু এই ১০২ ইয়াবা ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণ যথেষ্ট নয়। এদের দ্বারাই পরিচালিত হয়ে দেশের উঠতি তরুণসমাজ আজ বিপথগামিতার শিকার। যখন তারা বুঝতে পারে, তখন আর ফিরে আসার সময় থাকে না। বাধ্য হয়ে বেছে নিতে হয় অন্ধকার পথের জীবন।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যত্র সন্ত্রাস এবং জঙ্গি তৎপরতা এখনো পুরো নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি— তাই এ নিয়ে একটা আতঙ্ক সবার মধ্যে বিরাজ করছে। যারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তারা বিভ্রান্ত এবং পথভ্রষ্ট— এ কথা সমাজবিজ্ঞানী, অপরাধ বিশ্লেষক এবং চিন্তাশীল মানুষমাত্রই স্বীকার করেছেন। কট্টর উগ্রতাই তাদের বিভ্রান্তির অন্ধকার পথে টেনে এনেছে। এ সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত হয়ে অনেক তরুণই মাদকের মরণ নেশা ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। মূলত তরুণ শিক্ষার্থীরা জঙ্গিবাদে দীক্ষা নিচ্ছেন সাইবার জগৎ থেকে। এমন এক তথ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, একজন শিক্ষার্থী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৩ ঘণ্টা ফেসবুকে কাটায়। তাছাড়া প্রতি মিনিটে তারা ১৩টি নতুন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলে। নিয়মিত ব্যবহারকারী ১৩ থেকে ২৫ বছর বয়সী এসব শিক্ষার্থীকে ফেসবুকের মাধ্যমে যে কোনো মতবাদের দিকে প্রভাবিত করা সহজ। ফলে শিক্ষার্থীদের এই ফেসবুক আসক্তি উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন গবেষকরা। এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুদ্ধ সংস্কৃতিচর্চা বাড়ানো আর অভিভাবকদের সন্তানের বিষয়ে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

একসময় স্কুল কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে লাইব্রেরি থেকে সপ্তাহান্তে ছেলেমেয়েদের হাতে বই তুলে দেওয়া হতো। বাঙালি সংস্কৃতির চর্চায় রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী পালন এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাও লক্ষ করা যেত। এ ছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের চিত্তকে পরিশুদ্ধ করত। কিন্তু আজকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজস্ব লাইব্রেরি খুঁজে পাওয়া দুর্লভ, আর ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন হয়ে গেছে নিয়মরক্ষার কাজ। এখন আর স্কুল-কলেজে দেয়াল পত্রিকা বা বার্ষিক ম্যাগাজিনও প্রকাশ হতে দেখা যায় না। বিশেষত দালান ভাড়া করে যেসব স্কুল-কলেজের যাত্রা লক্ষ করা যায়, সেগুলোতে এসবের পরিবর্তে বরং ক্লাস পার্টির নামে বিজাতীয় সংস্কৃতির আধিক্য লক্ষণীয়। সুতরাং একমাত্র পাঠাভ্যাস ও শুদ্ধ সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চাই পারে শিক্ষার্থীদের মাদক ও জঙ্গিবাদের পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে। আমরা মনে করি, এজন্য অভিভাবককে সন্তানের প্রতি আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে, পাশাপাশি সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার কাজটিও করে যেতে হবে। বিষয়টি গুরুত্বসহ বিবেচনার দাবি রাখে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads