• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

খাদ্য হোক নিরাপদ

ফিরে আসুক কৃষির আদি ঐতিহ্য

  • প্রকাশিত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

এখন ভাবলেও স্বপ্নের মতো মনে হবে। গোহাল থেকে গরু নিয়ে হালচাষের জন্য ফসলের মাঠে ছুটে যাচ্ছেন কৃষক। প্রচলিত প্রাচীন ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মাঠে মাঠে হেসে উঠত সোনার ফসল। এখনো সোনার ফসলে ভরা সবুজ মাঠ হাসে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত সার, বিষের বিষক্রিয়ায় বর্ধিত ফসল ভেতরে ভেতরে শেষ করে দিচ্ছে মানুষের জীবনীশক্তি আর মাটির উর্বরতা। সেই সঙ্গে জমিতে প্রয়োগ করা মাটিতে মিশে থাকা বিষ পানির সঙ্গে মিশে ধ্বংস করে দিয়েছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। অনেক জলজপ্রাণী আর উপকারী পোকামাকড়ও ধ্বংস হয়েছে এই বিষক্রিয়ায়। এমন প্রেক্ষাপটে অস্তিত্বের প্রয়োজনেই মানবজাতি আবারো ফিরে যাচ্ছে কৃষির আদি ঐতিহ্য অরগ্যানিক কালটিভেশন বা জৈব কৃষিতে। সারা বিশ্ব এখন জৈব কৃষি নিয়ে গবেষণা, আলোচনা ও প্রায়োগিক বাস্তবায়নে অগ্রসর হচ্ছে।

আমরা জানি, ষাটের দশকে সবুজ বিপ্লবের নাম করে দেশে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকনির্ভর কৃষিব্যবস্থায় অবিবেচকের মতো অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ও বিষ ব্যবহার করে মাটির উপকারী অণুজীবগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে কমেছে কৃষিজমির উর্বরতা শক্তি। অথচ দেশের ৯০ শতাংশ কৃষকের কাছে মধ্য আশির দশকের আগপর্যন্ত অরগ্যানিক কৃষিই বেশি জনপ্রিয় ছিল।

আশার খবর হলো, সারা বিশ্বে এখন ভোক্তার স্বাস্থ্য, প্রাণবৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষায় রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকমুক্ত জৈব কৃষি সম্প্রসারণের প্রতি গুরুত্বারোপ করছে। বিশ্বের ১৭৯টি দেশে ২৪ লাখ কৃষক প্রায় ৫ কোটি ১০ লাখ হেক্টর জমিতে অরগ্যানিক পদ্ধতিতে আবাদ করছেন- এটি বিশ্ব জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো খবর। আরো ভালো খবরটি হচ্ছে, বাংলাদেশেও জৈব কৃষির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। কৃষকরা জৈবপদ্ধতিতে চাষ করে নিরাপদ ও মানসম্মত ফসল, ফলমূল, সবজির ভালো দাম পেয়ে খুশি। ক্রেতাদের আগ্রহ এ বিষয়ে কৃষকদের আরো অনুপ্রাণিত করছে। জানা গেছে, জৈব কৃষির মাধ্যমে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। সবমিলিয়ে জৈব কৃষির ক্ষেত্রে বাংলাদেশেও নতুন আশাবাদের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এই পদ্ধতি দেশের জন্য নতুন কিছু নয়; বরং এটি কৃষির পুরনো ও আদি ঐতিহ্য। কেননা জৈব চাষের জন্য বাংলাদেশের জমি সবচেয়ে উপযুক্ত। কারণ বাংলাদেশের মাটির ভলিউম এবং সূর্যালোকের প্রাচুর্য  জৈব কৃষির মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাতে পারে।

জৈব কৃষি ক্ষেত্রে কিউবা সরকার রাসায়নিক কৃষি থেকে বেরিয়ে খাদ্য ঘাটতির সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমকে অরগ্যানিক রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। জানা গেছে,  জার্মানির অনেকেই বিশ্বাস করেন অরগ্যানিক ফার্মিং হলো সেই মহৌষধ, যা দিয়ে একাধারে জলবায়ু ও পরিবেশকে বাঁচানো যাবে। অরগ্যানিক কৃষিপদ্ধতিতে সাফল্য পেয়েছে আফ্রিকার দেশ উগান্ডা। বাংলাদেশেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ‘আইপিএম কার্যক্রম’ জৈব কৃষির বিস্তারে বিপ্লবের পথে হাঁটছে। আমরা মনে করি, এই পথেই হাঁটা উচিত। এজন্য কৃষি অফিসাররা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে এবং রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্রসহ সব গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণায় কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষত যেসব এলাকায় কৃষকরা জৈব কৃষিতে সফলতা পেয়েছেন, তাদের তথ্য ও ভিডিওচিত্র সারা দেশের কৃষকদের অনুপ্রাণিত করবে। বাংলাদেশের কৃষির এই আদি ঐতিহ্য দেশের খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলার পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্যও নিশ্চিত করবে। এর সঙ্গে কৃষিপণ্য রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads