• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনা

টেকসই হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি

  • প্রকাশিত ০১ মার্চ ২০১৯

একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশে দেশে এখন একটি শব্দ বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে, তা হলো ব্লু ইকোনমনি বা সমুদ্র অর্থনীতি। বলা হচ্ছে, একটি দেশের আর্থিক সমৃদ্ধির পেছনে এই সমুদ্র অর্থনীতিও বড় ভূমিকা রাখতে পারে, যদি সমুদ্রসম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদেরও বিশাল সমুদ্রসম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হলে এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ১০ শতাংশে উন্নীত করা মোটেও কঠিন নয়। এ জন্যে প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা, যথোপযুক্ত প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবল।  সমুদ্র অর্থনীতির প্রবক্তাদের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে বস্তুত উন্নয়নশীল উপকূলীয় দেশ এবং দ্বীপরাষ্ট্রগুলো। মূলত তারাই প্রথম উপলব্ধি করে মানবজাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কী বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম আমাদের মহাসমুদ্রগুলো। অতএব টেকসই উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের প্রেক্ষিতে সমুদ্র অর্থনীতিকে আমাদের দেখতে হবে সম্ভবপর টেকসই উন্নয়ন অর্জনের পথে এক শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে।

বাংলাদেশে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বড় অংশটাই সমুদ্রবাহিত। ১৩০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি নিয়ে বিশ্বে আমাদের অর্থনীতির অবস্থান ৪৪তম। ধারণা করা যায়, দেশের তিন কোটি লোকের জীবিকা সরাসরি সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতির ওপর। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি, মাছ ধরা কিংবা বাণিজ্যিক পরিবহনের সঙ্গে সম্পর্কিত। সমুদ্র অর্থনীতিবিষয়ক কথাবার্তা বাংলাদেশে জোরেশোরে শুরু হয় মূলত ২০১২ সালে মিয়ানমার এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির পর থেকেই। ওই ঘটনায় এতদাঞ্চলের সমুদ্রসম্পদ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুবিশাল সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়ে যায় বাংলাদেশের সামনে।

এই খাতে সরকারি ও বেসরকারি— উভয় সেক্টরের সক্রিয় অংশগ্রহণ যেমন প্রয়োজন, তেমনি চাই দক্ষতাপূর্ণ ব্যবস্থাপনা। এই পর্যবেক্ষণ সমুদ্র বিশেষজ্ঞদের। প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মিটে যাওয়ার পর বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানার আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার। আবার একই সঙ্গে দুইশ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত ব্যবহূত হতে পারে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন হিসেবে যা ৩৭০ কিলোমিটারের সমান। তেল ও গ্যাসসহ এখানে মজুত রয়েছে বিবিধ খনিজ সম্পদের ভান্ডার। বাংলাদেশের প্রচলিত এবং বিকাশমান উভয় ধরনের খাতের সামনে টেকসই, নির্ঝঞ্ঝাট এবং সমতাভিত্তিক সামুদ্রিক প্রবৃদ্ধির অনেকগুলো সম্ভাবনা এনে হাজির করেছে সমুদ্র অর্থনীতি। যদিও এসব সম্ভাবনা কাজে লাগানোর বিষয়টি নির্ভর করছে নৌপরিবহন ও বন্দর অবকাঠামো, মৎসজীবিকা, উপকূলীয় পরিবহন, নবায়নযোগ্য ব্লু-এনার্জি, বায়োটেকনোলজি, সমুদ্র তলদেশে খননকাজ ইত্যাদি অনেক স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের ওপর।

তবে গভীর সমুদ্রে মৎস্যসম্পদ এরই মধ্যে আমরা কিছু পরিমাণে আহরণ করতে শুরু করেছি। মৎস্যসম্পদ পুরোপুরি আহরণ করা সম্ভবপর হলে বাংলাদেশে গড়ে উঠতে পারে বৃহদায়তন মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প। কেবল মৎস্য খাতেই তখন প্রয়োজন হবে লাখ লাখ দক্ষ কর্মীর। প্রক্রিয়াজাত মৎস্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করতে সক্ষম হবে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। সমুদ্রের ঢেউ ও বাতাস থেকেও বৈদ্যুতিক শক্তি আহরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। পর্যটন শিল্প প্রসারের যে সম্ভাবনা, সে সম্পর্কে খুব বেশি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন পড়ে না। ওষুধের কাঁচামাল, সামুদ্রিক খাদ্য ইত্যাদিও জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ প্রশস্ত করবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার লক্ষ্য স্থির করেছে। এই জায়গায় পৌঁছাতে হলে আমাদের অবশ্যই সমুদ্রসম্পদ আহরণে সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। সরকার এ বিষয়ে সচেতন ও সক্রিয়। ইতোমধ্যে সমুদ্রসম্পদ সেল গঠন করা হয়েছে। এই সেল কাজও শুরু করেছে। আমরাও আশাবাদী, সমুদ্র আমাদের অর্থনীতির এক বৃহৎ খাত হয়ে উঠবে অচিরেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads