• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

প্রাথমিক শিক্ষার সাফল্য-ব্যর্থতা

মানের দিকে নজর দিন

  • প্রকাশিত ০২ মার্চ ২০১৯

শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের সাফল্য প্রশংসনীয়। প্যারিসে ইউনেস্কো নির্বাহী বোর্ডের এক সভায় বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতি বিষয়ে বলা হয়, শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও অঙ্গীকারের কারণে বাংলাদেশ সার্বিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে শতভাগ শিশু স্কুলে যাচ্ছে। ১৯৮০ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে ১০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ছিল ৭৪ জন আর ছাত্রী ২৬ জন। এটা গড় হিসাব; গ্রামে ছাত্রীর সংখ্যা খুবই কম ছিল। ১৯৯৪ সালে কোনো ধরনের শিক্ষাগ্রহণ না করা নারী ছিল ৩৬ শতাংশ। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। কয়েক বছর আগেই শিক্ষাক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্রাথমিকে ও মাধ্যমিকে, জেন্ডার সমতা নিশ্চিত হয়েছে। এখন এই দুই পর্যায়ে ছেলের চেয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। এটাকে বর্তমান সরকারের বড় সাফল্য বলে অভিহিত করেছেন শিক্ষাবিদরা। বলতে দ্বিধা নেই, শিক্ষার সামগ্রিক অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক, বিশেষত প্রাথমিক শিক্ষায় জেন্ডার সমতা এবং শিশুদের স্কুলগামী প্রবণতা ইতিবাচক। এরই পাশাপাশি নেতিবাচক অনেক বিষয় আড়ালে থেকে গেলে শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত সুফল টেকসই হবে না। এক্ষেত্রে প্রথম এবং প্রধান সমস্যা হলো শিক্ষার গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ। শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষা এবং পড়ার চাপ ও বইয়ের বোঝা কমানো। একই সঙ্গে কোচিং, প্রাইভেট, ভর্তি ফি, সেশন ফি, প্রশ্নপত্র ফাঁস- এসব শিক্ষাবাণিজ্য বন্ধ করা জরুরি।

প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্যের পাল্লাটি অনেক ভারী হলেও শিক্ষার মানসহ পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোর কারণে শিক্ষার সামগ্রিক সফলতা নিয়ে প্রশ্নটি থেকেই যায়। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষায় মানের দিক দিয়ে যথেষ্ট পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। প্রাথমিকে ১১ বছর বয়সে বাংলাদেশের শিশুরা যা শেখে, তা অন্যান্য দেশের শিশুরা সাড়ে ছয় বছরে শিখতে পারে। এ হিসাবে বাংলাদেশের শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করলেও সাড়ে চার বছর পিছিয়ে থাকছে। শিশুদের প্রাথমিক পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মসূচির অভাবে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে। যদিও আমরা মনে করি, উন্নত বিশ্বের শিক্ষাপদ্ধতির সঙ্গে আমাদের দেশের এই তুলনা কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা নিয়ে দেশীয় প্রেক্ষাপটে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তবে যে বিষয়টিতে দ্বিমত নেই, সেটি হলো- শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে এখন বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এই প্রতিবেদন ছাড়াই দেশের সাধারণ মানুষের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে আরো অনেক আগেই। তাই শুধু স্কুলে ভর্তির সংখ্যা বাড়িয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার প্রবণতা শতভাগ দেখানোর ফলাফলটা আসলে কতটা বাস্তবসম্মত, সে বিষয় নিয়েই যত দুর্ভাবনা।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় গলদ অনেক। প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই বুনিয়াদি শিক্ষা চালুকরণ দরকার যেমন- কৃষি খামার, কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, মানবীয় মূল্যবোধ, শারীরিক শিক্ষা, সৃজনশীল ও সংস্কৃতি- গান, নাচ, আবৃত্তি, লেখালেখি, আঁকাআঁকি প্রভৃতি। তাহলে শিক্ষার প্রথম স্তর থেকেই কার ঝোঁক কোন দিকে বা কার মেধার প্রতিফলন কোন বিষয়ে ভালো হবে তা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। অতঃপর মাধ্যমিকে শিশু শিক্ষার্থীদের মেধার লক্ষণ আর আগ্রহের ভিত্তিতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার দিকে ধাবিত করতে হবে। মাধ্যমিকে বুনিয়াদি শিক্ষাকে পেশাভিত্তিক লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে নিতে পারলে যারা নানান কারণে ঝরে যাবে, তারাও কিছু না কিছু কাজ করতে পারবে। শিক্ষাজীবনের পরবর্তী ধাপগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের যোগসূত্র থাকা খুব বেশি দরকার। পেশার লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা ছাড়া শিক্ষার সকল পর্যায়ে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে না। মোটকথা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে সময়ের প্রয়োজনে। আমাদের শিক্ষামন্ত্রী এই বিষয়গুলোর বাস্তবতা চিন্তা করেই আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এটাই প্রত্যাশিত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads