• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
সোনালি আঁশের স্বর্ণালি সম্ভাবনা

সোনালি আঁশ

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

জাতীয় পাট দিবস

সোনালি আঁশের স্বর্ণালি সম্ভাবনা

  • প্রকাশিত ০৬ মার্চ ২০১৯

বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও অর্থনৈতিক আভিজাত্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি অনন্য সম্ভাবনাময় শিল্পের নাম- পাট। আমরা জানি, অবিভক্ত বাংলায় পাটের বর্ণময়, উজ্জ্বল ও সোনালি অধ্যায় শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। একসময় পাট ছিল আমাদের জাতীয় অর্থনীতির প্রধানতম আয়ের উৎস। নদীমাতৃক বাংলাদেশে বর্ষায় নৌপথে চলাচলে দেখা যেত পাটক্ষেতে পানি আর বাতাসের ঢেউ দোলানোর খেলা। বাংলাদেশের পাটের বাজার হিসেবে পরিচিত ছিল ভারত, চীন ও পাকিস্তান। বাংলার পাট সোনালি আঁশের মর্যাদা লাভ করে। সে সময় বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের হাটগুলোয়  দেখা যেত পাটের স্তূপের টাল। মাঠজুড়ে পাটের সবুজ আবাহনে, শীতল বাতাসে প্রকৃতিও ছিল নির্মলতায় টইটম্বুর। পাকিস্তান আমলে পাট এবং পাটজাত দ্রব্যের কারখানা স্থাপনে প্রতিযোগিতা চলছিল। সেই পাট শিল্প অনাদর ও অবহেলায় আশির দশকে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। বন্ধ হয়ে পড়ে এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী। বাংলাদেশের অর্থনীতির ইতিহাস থেকে এভাবে যখন বিদায় হতে যাচ্ছিল পাটের অধ্যায়, ঠিক তখনই স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় পাঁচ দশকের দ্বারপ্রান্তে এসে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে পাট শিল্প। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে এসে পাট শিল্পের বিকাশে এবং বাংলার পাটের স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী তোষা ও দেশি পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেন। পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের পাঁচ বছরের মাথায় জিন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে রবি-১ নামে পাটের একটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেন মাকসুদুল আলমের অনুসারীরা। নতুন উদ্ভাবিত রবি-১ জাতের তোষা পাটের জাত থেকে কমপক্ষে ২০ শতাংশ বেশি ফলন পাওয়া গেছে। এরপর থেকেই আবারো নবজাগরণে এগিয়ে যাচ্ছে পাট শিল্প। ঝিমিয়ে পড়া পাটকলের চাকা আবারো সচল হয়ে উৎপাদনে নতুন আশা জাগায়।

পাট উৎপাদনের বিবেচনায় দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। এখনো পাট উৎপাদনকারী পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পাটের মান সবচেয়ে ভালো। পাট শিল্পের বহুমাত্রিক ও নান্দনিক ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। আধুনিক রুচিশীলতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাট এবং পাট থেকে তৈরি সুতা দিয়ে শতরঞ্জি, ব্লেজার, জুতা, বাহারি রং-বেরঙের ব্যাগ, ঝুড়ি, ওড়না, ঘর সাজানোর নানা সামগ্রীসহ প্রায় দেড়শ ধরনের বহুমুখী পণ্য তৈরি হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব ও নান্দনিকতার কারণে রুচিশীল ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে পাটপণ্য।

দেশি পাটের লবণসহিষ্ণু নতুন চার জাতের পাট চাষে শতভাগ সফলতা পাওয়া গেছে। যার ফলে কৃষি অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। পাটের নতুন সম্ভাবনা উপলব্ধি করে শেখ হাসিনার সরকার পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করায় পাটচাষি ও রফতানিকারকরা উপকৃত হচ্ছেন। বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট রফতানি বন্ধ করা হয়েছে। সিনথেটিক বস্তা নিষিদ্ধ করে ‘প্যাকেজিং অ্যাক্ট’ পাস করায় পাটের বস্তার অভ্যন্তরীণ চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পাটের ব্যাগ, জুতা, স্যান্ডেল, তৈজসপত্রসহ বৈচিত্র্যময় পাটজাত পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে সারা দেশের ২১ জেলায় পাট শিল্প পল্লী গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশে পাট থেকে সুতার প্রধান কাঁচামাল ভিসকস উৎপাদন হবে। বলা হচ্ছে, পাট থেকে ভিসকস বা রেশম তৈরি করা গেলে তা সোনালি আঁশের সম্ভাবনা আরো বহু গুণে বেড়ে যাবে। পাট থেকে ডেনিম কাপড় তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। পাট দিয়ে প্রচলিত পলি ব্যাগের মতোই পচনশীল পলিথিন ব্যাগ আসছে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি হবে এই ব্যাগ। পাট পাতার চা তৈরি হচ্ছে দেশে। সবমিলিয়ে বলা যায় সগৌরবে ফিরে আসছে বাংলার পাটের সোনালি দিন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads