• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

উন্নয়নে নারীরা সমান্তরাল ও সহযোগী

  • প্রকাশিত ০৮ মার্চ ২০১৯

তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ মুছে দিয়ে উন্নত দেশের স্বপ্ন সোপানে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকায় গতিসঞ্চারের ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি সমান্তরালভাবে ভূমিকা রাখছেন নারীরাও। এরই প্রতিফলন হিসেবে সব পেশায় নারীর অংশগ্রহণ ও সাফল্যকে মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। কেবল সংসারে নয়, ঘরে-বাইরে সবখানে নারীদের সাহসী দৃপ্ত পদচারণায় সমৃদ্ধ হচ্ছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। পারিবারিক ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নারীদের বলিষ্ঠ ভূমিকায় সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। নারীদের অংশগ্রহণে সামাজিক সব ইতিবাচক পরিবর্তন সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করছে।  বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বাঙালির সব জাতীয় অর্জনে নারীর অবদানকে খাটো করার কোনো সুযোগ নেই। কেননা সর্বক্ষেত্রেই বাংলাদেশের নারীরা সংগ্রামী ও পুরুষের সহযাত্রী।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলধারার কর্মক্ষেত্রগুলোতে নারীর অবদান বেড়েই চলেছে। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান ২০ শতাংশের বেশি। তবে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারীর অবদান স্বীকার করলে এই হার ৪০ শতাংশের বেশি হবে বলে অনেক বিশ্লেষণে এসেছে। সিপিডির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, গৃহস্থালিতে নারীর কাজ জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয় না। তবে এই হিসাব আমলে নিলে নারীর গৃহকর্মের শ্রমের প্রাক্কলিত বার্ষিক মূল্য (২০১৩-১৪ অর্থবছর অনুযায়ী) জিডিপির ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ। সিপিডির হিসাবে গৃহস্থালি কাজে দেশের নারীরা বছরে ১৬ হাজার ৬৪১ কোটি ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন। যার আর্থিক মূল্য দুই লাখ ৪৯ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা। জিডিপিতে এই আর্থিক মূল্য যোগ হলে নারীর হিস্যা বর্তমানের ২০ শতাংশ থেকে ৪৮ শতাংশে দাঁড়াবে। সত্যিকারভাবে গৃহকর্মে নারীর অবদানকে আর্থিক মূল্যায়ন করলে হিসাবটি তেমনই দাঁড়ানোর কথা। সে হিসাবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর অবদান কোনো অংশেই কম নয়; বরং বেশিই হওয়ার কথা।

আশার খবরটি হলো, গত এক যুগে বাংলাদেশে কৃষিতে নারীর প্রবেশ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার মতোই দেশের কৃষি খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এখন নারীরা। বিভিন্ন হিসাব থেকে জানা যায়, ১ কোটি ৬৮ লাখ নারী কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে কাজ করছেন। শুধু কৃষি খাতে নিয়োজিত আছেন ৯০ লাখ ১১ হাজার নারী। বিবিএসের তথ্যানুযায়ী গত ১০ বছরে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ  বেড়েছে ১০৮ শতাংশ। অপরদিকে পুরুষের অংশগ্রহণ কমেছে দুই শতাংশ। এ ছাড়া শিল্প ও সেবা খাতে কাজ করেন যথাক্রমে ৪০ লাখ ৯০ হাজার এবং ৩৭ লাখ নারী। অন্যান্য পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশের কলকারখানায় পুরুষের চেয়ে নারীশ্রমিকের সংখ্যা বেশি। হিসাবে দেখা যায়, বিভিন্ন কলকারখানায় ২১ লাখ ১ হাজার ৮৩০ জন নারীশ্রমিক কাজ করছেন। যেখানে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা ১৯ লাখ ৯৫ হাজার ৫৫৭ জন। এছাড়া  পোশাক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত চার মিলিয়ন বা ৪০ লাখ কর্মীর মধ্যে ৮০ ভাগই নারী। সুতরাং দেশের সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থায় নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রবণতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক।

বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদানের পাশাপাশি জাতিসংঘের শান্তি মিশনেও বাংলাদেশের নারীর অবদান বাড়ছে। উন্নয়নের প্রথম শর্তই হলো সমাজে নারীর কাজের স্বীকৃতি, মূল্যায়ন। একই সঙ্গে নারীর সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা না পেলে সামগ্রিকভাবে টেকসই হয় না। তাই দেশের সার্বিক উন্নয়নে নারীর অবদানকে কাজে লাগাতে হবে। আর এজন্য নারীর সঠিক মূল্যায়ন, স্বীকৃতির শুরু হতে হবে ঘর থেকেই। বদলাতে হবে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। কেননা ঘর-সংসার ও পারিবারিক সমৃদ্ধির চালিকাশক্তি পুরুষ একা নন, নারীও সমানতালে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। এদিক থেকে বিবেচনা করলে নারীর সঠিক মূল্যায়ন পুরুষের জন্য সহায়ক এবং ইতিবাচক।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads