• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

সৌদি-বাংলাদেশ চুক্তি ও সমঝোতা

দৃঢ় হোক উভয় দেশের সম্পর্ক

  • প্রকাশিত ১০ মার্চ ২০১৯

বিদ্যুৎ ও জনশক্তিসহ কয়েকটি খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে দুটি চুক্তি ও চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। যার মাধ্যমে দেশে দেড় থেকে আড়াই হাজার কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তার কার্যালয়ে সৌদি প্রতিনিধিদের সঙ্গে এসব চুক্তি ও সমঝোতায় সই করেন বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থার প্রতিনিধিরা।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে সেবাপণ্য উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে সৌদি আরব। আর এজন্য দেশটি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, জনশক্তি এবং উড়োজাহাজকে গুরুত্ব দিয়ে ১৬ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে। সৌদি আরবের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাভাবিকভাবেই ইতিবাচক। কেননা এর মধ্য দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনাই সামনে আসে, যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই আমরা মনে করি। আবার এ কথাও সত্য, একটি দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির ধারা বজায় রাখা এবং দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। এতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার হয়।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যায়, চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষরের আগে রাজধানীর একটি হোটেলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সৌদি আরব ও বাংলাদেশ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই সৌদি মন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়ে প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, এখানে এসে তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যা উন্নয়ন দেখেছেন তার খুব প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে অতিদরিদ্রের হার কমে আসায় সৌদি মন্ত্রী বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। তারা আশা করছেন এটা আরো কমে আসবে। মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাভি বাংলাদেশ-সৌদি সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন এবং বাংলাদেশকে এশিয়ার টাইগার হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

একই দিনে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিনিয়োগের জন্য ভৌগোলিক ও কর্মযোগ্য কর্মীর দিক থেকে আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরেন। ওই সংলাপে দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়নে যৌথ বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল গঠনে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক মন্ত্রী ড. মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি।

দেশের জনশক্তির বর্ণনা দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে ১৬৩ মিলিয়ন মানুষ। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশই কর্মক্ষম। এ কর্মক্ষম মানুষকে আমরা দক্ষ করে গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। বিদ্যুৎ, সৌরশক্তি, জ্বালানি, টেলিকমিউনিকেশন এবং তথ্যপ্রযুক্তি, পেট্রোকেমিক্যাল, ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণের মতো খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে সৌদি আরব।

ওই সংলাপ অনুষ্ঠানে বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক মন্ত্রী ড. মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি বলেন, বাংলাদেশি ভাইয়েরা গত এক দশকে সৌদি আরবের উন্নয়নে সহায়তা করেছে। প্রায় দুই মিলিয়ন বাংলাদেশি সৌদি আরবে আছেন এবং তারা নতুন সৌদি আরব গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখছেন। দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়নের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশ-সৌদি আরব বাণিজ্যিক লেনদেন বেশ কম। উভয় দেশের মধ্যে আন্তঃবাণিজ্যের পরিমাণ মাত্র ১.৪ বিলিয়ন ডলার, যা মোটেও সন্তোষজনক নয়।

জানা যায়, বাংলাদেশে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সৌদি আরবের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন মাজিদ আল-তাওজরিকে প্রধান করে সৌদি-বাংলাদেশ জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি অব ইনভেস্টমেন্ট গঠনে একমত হয়েছে দুই দেশ। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি জয়েন্ট ইকোনোমিক কাউন্সিলও গঠন করা হবে বলেও জানা গেছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে হাঁটছে; আর দেশের এই অগ্রগতির পথে বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতার বিষয়টি উপেক্ষা করার মতো নয়। আর এ দেশে বিনিয়োগের আগ্রহের মাধ্যমে উভয় দেশের সম্পর্ক আরো মজবুত হবে বলেই আমরা আশাবাদী।

সংশ্লিষ্টরা সৌদির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে যথাযথভাবে কাজ করবেন বলে আশা করছি। কারণ দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ যোগাযোগ এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিকল্প নেই। নতুন করে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে ব্যবসার একটা নতুন দ্বার উন্মোচিত হওয়ার যে সম্ভাবনার বিষয়টি সামনে এসেছে— তার সফল বাস্তবায়ন আমাদের প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads