• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
কৃষকবান্ধব উদ্যোগ নিতে হবে

কৃষকবান্ধব উদ্যোগ নিতে হবে

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

ফসল উৎপাদনে বাড়তি ব্যয়

কৃষকবান্ধব উদ্যোগ নিতে হবে

  • প্রকাশিত ১১ মার্চ ২০১৯

সম্প্রতি এক খবরে জানা যায়, প্রথাগত পদ্ধতিতে ধান-গম রোপণ ও কর্তনের কারণে কৃষকের বাড়তি ব্যয় ১১ হাজার কোটি টাকা। এ বিষয়ে হিসাব উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এক হেক্টর জমির ধান ও গম কর্তনে প্রথাগত পদ্ধতিতে খরচ হয় ৬ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকা। অথচ যন্ত্রের মাধ্যমে এ কাজটি করলে খরচ পড়ার কথা মাত্র ৮০০-৯০০ টাকা। একইভাবে প্রথাগত পদ্ধতিতে ধান  রোপণে  হেক্টরপ্রতি খরচ ৮ হাজার ৪০০ টাকা। এ কাজটিই যদি যন্ত্রের মাধ্যমে করা হতো, তাহলে খরচ হওয়ার কথা মাত্র ৭৫০ টাকা। দেখা যাচ্ছে, যান্ত্রিকীকরণের অভাবে প্রথাগত পদ্ধতিতে ধান ও গম রোপণ এবং কর্তনে হেক্টরপ্রতি কৃষককে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে ১৩-১৪ হাজার টাকা। এ হিসেবে দেশের প্রধান দুই শস্য রোপণ ও কর্তনে প্রথাগত পদ্ধতির কারণে কৃষককে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে বছরে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএইউ) ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে এখন কৃষিজমির মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশে রোপণকাজে যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। অন্যদিকে কর্তনে যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে মাত্র শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ জমিতে। অর্থাৎ কৃষিতে রোপণ ও মাড়াইকাজে যন্ত্রের ব্যবহার এখনো মোট আবাদি জমির ১ শতাংশ ছুঁতে পারেনি। কাজেই কৃষিক্ষেত্রে যান্ত্রিক ব্যবহারে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি তা স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে।

নদীবিধৌত বাংলাদেশের মাটি অত্যন্ত উর্বর। সুদূর অতীতকাল থেকেই এ দেশের অর্থনীতিও কৃষিপ্রধান। আমাদের বিপুল বর্ধিষ্ণু জনগণের খাদ্যের জোগান দিতে অবশ্যই আমাদের কৃষির ওপর বাড়তি নজর দিতে হবে। আর তা করতে হলে কৃষিকে প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে বাংলার কৃষকদের প্রযুক্তি দক্ষতায় প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষি প্রযুক্তিতে তাদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। এজন্য প্রয়োজন আধুনিক কৃষিযন্ত্র ও এর ব্যবহার বিষয়ক মেলার আয়োজন করা। উপজেলা কৃষি অফিসগুলোর মাধ্যমে এ ধরনের মেলার আয়োজন করে কৃষিযন্ত্র সম্পর্কে কৃষকদের ধারণা দিতে হবে। সেই সঙ্গে সহজে ও সাশ্রয়ী কিস্তিতে এসব কৃষিযন্ত্র কৃষকদের দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা দেখেছি, তথ্যপ্রযুক্তি ও শিল্প খাতে দেশের যথেষ্ট উন্নতি হলেও দেশের ৭০ ভাগের বেশি মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল হওয়া সত্ত্বেও কৃষি যান্ত্রিকীকরণে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

আমাদের দেশের বেশিরভাগ কৃষক নিরক্ষর ও দারিদ্র্যপীড়িত। ব্যবসায়ী বা শিল্পোৎপাদনকারীদের মতো করে তারা ফসলের উৎপাদন ব্যয়ের হিসাব করতে পারে না। দেখা গেছে, আমাদের কৃষকরা শুধু সার-বীজ বাবদ ব্যয়, সেচ ব্যয়, শস্য বপন ও কর্তন-মাড়াই বাবদ কৃষাণ খরচের হিসাব জানে। তাদের হিসাবে জমির মূল্য অনুপাতে উৎপাদন বা নিজের শ্রমের মজুরিকে ধরা হয় না। কৃষকের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই। প্রণোদনা ভাতা নেই। পারফরম্যান্স ভাতা নেই। বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির সুযোগ নেই। নেই বীমা সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা। অথচ জাতীয় অর্থনীতিতে তাদের অবদান অসীম। দেশের খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় তাদের লড়াই চলে প্রকৃতির সঙ্গে। তাই কৃষকের শ্রম, মেধা, সময়, বিনিয়োগ ও ব্যবহূত সম্পদের আলোকে আয়-ব্যয় হিসাব করলে তাদের কিছুই থাকে না। তারা কেবলই দেশের তরে অকাতরে নীরব নিবেদিত ভূমিকায়। এ অবস্থার পরিত্রাণ দরকার। এজন্য শ্রম ও সময় সাশ্রয়ে কৃষকের কাছে কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারকে জনপ্রিয় করতে হবে। কৃষিতে সরাসরি কৃষকের জন্য সরকারের ভর্তুকি সহায়তা বাড়িয়ে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads