• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
চাই শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ

চাই শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা

চাই শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ

  • প্রকাশিত ১৮ মার্চ ২০১৯

সম্প্রতি ‘প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৯’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ না দিতে অনুরোধ জানান। কোমলমতি শিশুদের লেখাপড়ায় কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে আবদ্ধ করাকে তাদের প্রতি একধরনের মানসিক অত্যাচার বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। মূলত প্রাথমিক স্তরের কারিকুলামকে যুগোপযোগী করতে গিয়ে যা দেওয়া হচ্ছে তা শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য কতটুকু প্রয়োজন— সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি না। উপরন্তু সরকারি স্কুলের বাইরে পাড়ায়-মহল্লায় দালান ভাড়া নিয়ে গড়ে ওঠা বেসরকারি স্কুল বা কিন্ডারগার্টেনগুলো চাপিয়ে দিচ্ছে নানা বিষয়ের বই, যেগুলো ত্রুটিপূর্ণও বটে। ফলে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে মেধাহীনতায় পর্যবসিত করেছে।

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় থাকা উচিত ছিল। মূলত একটি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের ক্ষেত্র হচ্ছে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। তার মধ্যে আবার কার্যত তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সে ভালোভাবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং স্ব-স্ব ধর্ম সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান অর্জন করবে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ এসব স্কুলে ইংরেজি শেখানোর নামে দ্বিতীয় শ্রেণির বাচ্চাকেই ইংরেজি প্রতিশব্দ/বিপরীত শব্দ শেখানো হয়। বাংলা ও ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পড়ানো হয়। যখন এই শিশুরা সঠিকভাবে বাংলা বাক্য লিখতে পারে না, শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করে পড়তে জানে না, তখন তাদের জ্যামিতির কোণ, ত্রিভুজ, আয়তক্ষেত্র, বর্গক্ষেত্রসহ সমাধানের অঙ্কও করানো হচ্ছে। দুর্ভাগ্য যে, এখনকার প্রাথমিক স্তরের শ্রেণিগুলোতে দ্রুতপঠন নেই, শ্রুতিলিখন নেই, হাতের লেখা সুন্দর করার জন্যে পৃথক ক্লাস বা বাড়ির কাজও থাকে না। তদুপরি বাংলা, ইংরেজি, গণিত বইয়ের বাইরে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে পরিবেশ, বিজ্ঞান, কম্পিউটার, সাধারণ জ্ঞান প্রভৃতি বই। এই শিশু বয়সে তার এতকিছু জানার প্রয়োজন কী রয়েছে, তাও বোধগম্য নয়।

এ অবস্থায় হাইকোর্টের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের ভারী ব্যাগ বহন বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। মূলত সরকারের দেওয়া বইয়ের সঙ্গে স্কুল থেকে দেওয়া সহায়ক বইসহ প্রতিটি বিষয়ের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনটি পর্যন্ত খাতা ও ডায়েরি থাকে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ব্যাগে। পাশাপাশি রয়েছে টিফিন বক্স ও কমপক্ষে এক লিটার পানি। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে স্কুলের আগে ও

পরে কোচিংয়ের জন্য সহায়ক বই ও খাতার কারণে ব্যাগের ওজন অতিরিক্ত হয়ে থাকে।

চিকিৎসকদের মতে, ৬ বছরের একটি ছেলেশিশুর আদর্শ ওজন ২০.৬৯ কেজি এবং মেয়েশিশুর ১৯.৯৫ কেজি। সে হিসেবে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ব্যাগের ওজন সর্বোচ্চ ২ কেজি হওয়ার কথা অর্থাৎ শরীরের ওজনের ১০ শতাংশ। সেখানে ঢাকার খ্যাতনামা স্কুলগুলোর প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ব্যাগের ওজন দেখা গেছে সর্বনিম্ন ৪ থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ কেজি। অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও হিসাবটা একইরকম। অথচ উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও নিজেদের ওজনের তুলনায় অনেক ভারী ব্যাগ বহন করে চলেছে শিশুরা, যা দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক অসুস্থতার কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসকরা।

আমরা জানি, প্রতিটি শ্রেণিতেই বোর্ডের বইয়ের বাইরে সব স্কুলেই অহেতুক বিষয় বাড়িয়ে এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীর মানসিক চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি পড়ার প্রতি ভীতি সৃষ্টি করছে। সুতরাং এ বিষয়ে সরকারকেই আগে ঠিক করতে হবে এই শ্রেণিগুলোতে কীভাবে অযৌক্তিক বিষয়গুলো বাদ দিয়ে ছেলেমেয়ের ব্যাগের ওজন কমানো যায়। আশা করি, প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহে দেওয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবাণী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে অনুসরণ এবং শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি

অনুরাগ সৃষ্টিতে অহেতুক চাপ পরিহার করে তাদের স্বাভাবিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads